নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল

1

নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ৯২ দিন মিলটি যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়াই আখ ম্ড়াাই চলছে। যা গত দশ বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এছাড়া চিনির আহরণের হার রয়েছে ৫.৭৫। এটাও বিগত তিন বছরের সবথেকে বেশি। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মিলটির মাড়াই শুরু হয়। ফলে চলতি মাড়াই মৌসুম শেষে লাভের মুখ না দেখলেও লোকসানের বোঝা বলে আশা মিলটির। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহি বৃহত এ ভারি শিল্পটি এমন সফলতার সাথে চলছে মিল প্রশাসন ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে।

চলতি মৌসুমের শুরুতে সরকার দেশের ছয়টি অলাভজনক চিনিকল বন্ধ করে দেয়। এসময় মোবারকগঞ্জ চিনিকলটিও বন্ধের গুঞ্জন শুরুর হয়। সেসময় স্থানীয় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার’র নির্দেশনায় মিল প্রশাসন ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল মিলের দূর্নীতি বন্ধে কাজ শুরু করেন। মিলের প্রতিটি বিভাগে সকল কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে পরিচালনা শুরু করেন। ফলে গত দশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ব্রেকডাউন ছাড়াই মিলটির চলছে।

এছাড়া চলতি মৌসুমে কৃষকদের আখ ক্রয়ের টাকা দ্রুতই পরিশোধ করা হচ্ছে। ফলে মিল এলাকার কৃষকরা খুশি। যা বিগত ১০ বছরে এমন ঘটনা বিরল। এছাড়া এর আগে শ্রমিক নেতাদের আক্রোসে পড়ে ১৩ জনকে অন্যত্রে বদলি করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে মিলটির শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম রসুল ১২ জনকে পুনরায় মোবারকগঞ্জ চিনিকলে ফিরিয়ে আনেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিলের ৮ ইউনিটে ৪৮ কেন্দ্রে আওতায় কৃষক রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এবছর মাঠে দন্ডায়মান আখ রয়েছে প্রায় আট হাজার একর। আগামি মৌসুমের জন্য রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রায় ১০ হাজার একর।

মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের আইন ও দরকষাকষি সম্পাদক গোলাম রসুল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষে সোনার বাংলা গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই মুজিব বর্ষে একের পর এক রাষ্ট্রীয় কলকারখানা বন্ধ করে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল বেসরকারী চিনি শিল্পের মালিকদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের ১৫ চিনিকল প্রতি বছর সরকারকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভ্যাট প্রদান করে। সেখানে এসব মিলে বিভিন্ন যৌক্তিক কারনে লোকসান হয় ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের সাথে বেসরকারী চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি অনুযায়ি রিফাইনারী সাদা চিনি দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। শুধুমাত্র দেশের বাইরে বিক্রি করবে কিন্তু বেসরকারী চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সে শর্ত না মেনে দেশের বাজারে চিনি বিক্রি করছে। শুধু তাই নয় খোদ সরকারের টিসিবি’র এজেন্টরা দেশীয় মিলের চিনি বিক্রি না করে বেসরকারী মিলে উৎপাদিত সাদা চিনি বিক্রি করে থাকে। একটি মহল দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করে বিদেশীদের হাতে চিনির বাজার তুলে দিতেই এজেন্ডা নিয়ে এসব কাজ করছে বলে দাবি এই নেতার।

এদিকে আখের দাম পেয়ে খুশিও কৃষক। কালীগঞ্জের বাবরা গ্রামের আখচাষী আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা অন্যান্য বছর আখের দাম সময়মত পায়না। এবছর আমার ঠিক মত আখের দাম পাচ্ছি। যে কারণে কৃষকদের মাঝে আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কারখানার শ্রমিক বাবুল প্রতাপ বলেন, ইতিপুর্বে আমাদের বেতন ঠিকমত পেতাম না। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকত। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছি। বর্তমানে সঠিক সময়ে বেতন ভাতা পাওয়ায় এখন আমরা ভালো আছি। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি গোলাম রসুল নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের অধিকার রক্ষায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। মিলের বিভিন্ন সেক্টরে তিনি দুর্নিতী কমিয়েছেন। এই কমিটি আসার পর আমরা ভালো আছি।

এ ব্যাপারে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর কাঁচামালের সহজলভ্যতা ছিল। এছাড়াও আখের ভালো ফলন হওয়া আর শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় মিলটি ব্রেকডাউন হয়নি। যে কারণে মিলের চিনি আহরণের হার বেড়েছে। আমরা আশা করছি গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর অর্ধেক পরিমান লোকসান হবে। আর এভাবে চললে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে লাভের মুখ দেখবে।

-খাইরুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহ