খুলনায় অস্বাভাবিক বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম

2

স্টাফ রিপোর্টার

খুলনায় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে রড ও সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম। মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভবন তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে ইস্পাতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বর্তমানে নগরীতে চলছে আটশ’কোটি টাকার ড্রেন ও সড়ক সংস্কার কাজ। একই সাথে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), জেলা পরিষদ, বিভাগীয় প্রশাসন, সড়ক বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের নির্মাণ কাজ চলছে। চলছে বিভিন্ন ডেভেলপার ফার্মের ভবন নির্মাণ কাজ। ফলে খুলনায় প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হচ্ছে রড, সিমেন্ট, পাথর আর অন্যান্য সামগ্রীর। যথা সময়ে এসব সামগ্রী না পাওয়ায় অনেক কাজও থামকে রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিক্স গ্রেডের রড প্রতি টন গড়ে ৬২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এখন সেই রড বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭০ থেকে ৭১ হাজার টাকা প্রতি টন। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। অপরদিকে বেড়েছে সিমেন্টের দামও। দুই মাস আগে যে সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৩৮৫ টাকা প্রতি বস্তা, এখন তার দাম ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা।

খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের গাবতলা এলাকার বাসিন্দা হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর দাম এতো বেড়েছে যে, আমাদের মত মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে বাড়তি টাকা খরচ করে রড, সিমেন্ট বালু কিনে বাড়ি নির্মাণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩ থেকে ৪ চার মাস আগেও যে রড ৫০ হাজার টাকা টন পাওয়া গেছে, সেই রড এখন ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাইছে।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু রডই নয়, সিমেন্ট ও বালির দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না।’

রূপসা উপজেলার কাজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাফর শেখ বলেন, ‘গত দু’দিন আগে নির্মাণ কাজের জন্য রড-সিমেন্ট কিনতে গিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। সব কিছুর দাম বেড়েছে।’

এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলার কাজদিয়া বাজারের জে. কে ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী জুলফিকার আলি বলেন, ‘আমরা যে দামে রড ও সিমেন্ট কোম্পানির কাছ খেকে ক্রয় করি, তার থেকে সামান্য লাভে সেগুলো বিক্রি করে থাকি। এটা শুধু গ্রামাঞ্চলের চিত্র নয়, নগরেও একই পরিস্থিতি। খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যারা বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে।’

খুলনার প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার শাহাজাহান কবির প্যারিশ বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গেলে সাইটের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি বস্তা ৩০ টাকা বেশি দিয়ে সিমেন্ট কিনতে হচ্ছে। রড টনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি। আমরা আমাদের কাজের সাইটে বি’ফর্ম রড ব্যবহার করে থাকি। রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ার পরেও আমরা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ আরও কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রড় সিমেন্টের দাম এভাবে বাড়লে নির্মাণ কাজ আগের রেটে অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রডের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএসআরএম খুলনা অফিসের রিজিওন ইনচার্জ কাজি নাজমুল হক বলেন, ‘এটা আমাদের কোম্পানি জানে। তবে যতটুকু জেনেছি, মার্কেটে ইস্পাতের দাম বেড়ে গেছে।’ সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সেভেন রিংস সিমেন্ট খুলনা অফিসের মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। দাম বেড়েছে, কেউ কেউ বৃদ্ধি করেছে। আবার অনেকেই বাড়ানোর পর্যায়ে আছে। সবাই দাম বৃদ্ধি করেনি। আমাদের সেভেন রিংস সিমেন্টে একটা অফার ছিল সেটা উঠিয়েছে। কিছু কোম্পানি বলছে ৫০ টাকা দাম বৃদ্ধি করা হবে। তবে কারণ কী, সেটা বলতে পারবো না। পত্রিকায় দেখলাম আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির দ্রব্যের দাম বেড়েছে।’