মাঠে নামতে চায় বিএনপি, সতর্ক অবস্থায় আওয়ামী লীগ

9
Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি কী মাঠে দাঁড়াতে পারবে! ছয় মহানগরে তাদের সমাবেশের অনুমতির বিষয় নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা-ভাবনা চলছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাববে। সহিংস কর্মসূচি হলে দমন করা হবে। আর বিএনপি বলছে, অনুমতি না মিললেও তারা কর্মসূচি পালন করবে। অন্যদিকে বিশ্লেষকদের দাবি, করোনাকালে বড় জমায়েত জনগণের ঝুঁকি বাড়াবে। সরকারবিরোধী জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রচারণা ও নড়াইলে একটি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার রায়ের পরপরই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে দেশের ছয় মহানগরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে তারা।

বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। বিএনপির কর্মসূচি মানেই সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়ানো। আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গনমাধ্যমকে বলেছেন, দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকা- চলবে। আর বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাববে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর আশা, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামব।

সরকার সমাবেশের অনুমতি না দিলেও বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই বছরপূর্তিতে দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা এবং কালো দিবস ঘোষণা করে সারা দেশে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। তবে ওইদিন বেলা ১১টায় স্বল্পপরিসরে শুধু ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বারবার বলে আসছে বিএনপির কর্মসূচি সহিংস। এজন্য অতীতে তাদের কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এবার নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সারা দেশে দলটি সাংগঠনিক তৎপরতাও জোরদার করছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এর আগের দিন শুক্রবার ছয় মহানগরে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।

সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে হবে প্রথম সমাবেশ। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে, ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায়, ১ মার্চ রাজশাহীতে, ৩ মার্চ ঢাকা উত্তরে ও ৪ মার্চ সমাবেশ হবে ঢাকা দক্ষিণে।

বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা দেশ ও জনগণকে নিয়ে ভাবছি। ইশতেহার অনুযায়ী দেশের উন্নয়ন কর্মকা- কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয় নিয়ে ভাবছি। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাববে। তবে নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকা- চলবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলায় সম্মেলন এবং জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আর বিএনপির কর্মসূচিতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  তিনি বলেছেন, বিএনপি অহেতুক রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। তাদের কর্মসূচি মানেই সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়ানো। এখনও পাল্টা কোনো কর্মসূচি না নিলেও সতর্কতার অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীনরা নিয়মিত কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিব বর্ষ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ, প্রতিনিধি সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সরকার সমাবেশের অনুমতি না দিলেও বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

তিনি বলেন, সরকারি দলের পাল্টা কর্মসূচি নির্ধারণ না হওয়ার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমরা আশা করি, সরকার বাধা দেবে না। বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবে। দুদু বলেন, বিএনপি কর্মসূচি দেওয়ার পর হঠাৎই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি সরকারের উদ্বিগ্নতার বহিঃপ্রকাশ। গণতান্ত্রিক কর্মসূচি রাজনৈতিক সৌন্দর্য। সব রাজনৈতিক দলেরই কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামব। আমাদের কর্মসূচির পক্ষে জনগণকে এক করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, বিরোধীদল হিসেবে আমরা আমাদের কথা বলবই। প্রধানমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, তিনিও কার্যকর শক্তিশালী বিরোধীদল চান। এখন আমরা কর্মসূচি দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ কী করল, না করল আমাদের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা ছয়টা মহানগরে ছয়টা সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জনতার সামনে ভোট কারচুপির বিষয়গুলো তুলে ধরতে চাই, আমরা জনতার সামনে ভোটের অধিকারের কথা বলতে চাই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলতে চাই। আমরা বলতে চাই, আমাদের জনগণের কাছে যেতে যেন কোনো বাধা না দেওয়া হয়। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আমাদের সমাবেশ করতে চাই।

বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা এবং আওয়ামী লীগের মাঠে থাকার ঘোষণায় করোনাকালে জনগণের ঝুঁকি আরও বাড়াবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান। তিনি বলেন, প্রথমত পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি গণতন্ত্রের জন্য শুভলক্ষণ নয়। জনগণ চায়, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের জনসমর্থন আছে। তারা কর্মসূচি পালন করুক। সরকারও তাদের বাধা দেবে না। আমরা বড় এই দুদলের মধ্যে সমঝোতা চাই। তাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসুক। করোনার মধ্যে বৃহৎ জমায়েতের পক্ষে নন এই বিশ্লেষক। ড. রেহমানের মতে, আমাদের ভুলে গেল চলবে না, দেশে এখনও অতিমারিকাল চলছে। তার ওপর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত ডেকে এনে ঝুঁকি আরও বাড়াবে। এ অবস্থায় সংঘাত কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে কিংবা কর্মসূচি দেবেÑ এমনটি বিশ^াস করতে চাই না। কারণ কর্মসূচি যে কেউ দিতে পারে।