খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সংসদে বিল পাস

5
Spread the love

আসাদুজ্জামান ইমন, ঢাকা::

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে খুলনায় মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংসদে বিল পাস হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ‘শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিল-২০২১’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। গত ১৯ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে খুলনা অঞ্চলের সব মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট বা অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসবে। অন্যান্য মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এই বিল পাস হয়েছে। বিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এখতিয়ার এবং ক্ষমতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে চিকিৎসা শাস্ত্রের মানোন্নয়নে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা, আধুনিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অতি প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত।’ বিলে পরিদর্শন ও আর্থিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, ক্ষমতা ও দায়িত্বও বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, অনুষদ, বিভাগ, প্রয়োজনীয় কমিটি ও শৃঙ্খলা বোর্ড গঠন এবং এদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে খসড়া আইনে। রাষ্ট্রপতি হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সময় বিরোধী দল-জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করেন। বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি হতে যাচ্ছে, সেটি সত্যিকার অর্থে কার্যকরী বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। নাম ও কামের মিল থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়েছে সেটি কোনও গ্রেডেই নেই। দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ হয় এখানে। যে উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নিয়ে এটি স্থাপন করা হচ্ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেন এবং প্রধানমন্ত্রী যথাযথ নির্দেশনা দেন তবেই এটি কাজ করবে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা। এ খাতের দুর্নীতি ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতির ডিপোতে পরিণত হয়েছে।’

হারুন বলেন, ‘মন্ত্রী ১১২টি মেডিক্যাল কলেজের তথ্য দিলেন। কিন্তু এগুলোর গুণগত মান কী? সংখ্যা দিয়ে কী করবো? যদি মান না থাকে। করোনার ভ্যাকসিন কত দামে কিনলাম? বাণিজ্য হচ্ছে কিনা জানা দরকার। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা? চিকিৎসকরা ডিউটির সময় অন্য জায়গায় প্রাকটিস করেন।’ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে হাসপাতালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।  বিএনপির সংরিক্ষত আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হয়তো কমবে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বরাদ্দ, চরম দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা- এগুলো কি কমবে? চিকিৎসার খরচ বাংলাদেশে বাড়ছে। পৃথিবীর কোনও দেশ করোনা নিয়ে ব্যবসা করেনি। বাংলাদেশে সেটি দেখেছি।’

নতুন নতুন আইন করে কী হবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ সেবা না পায়। নকল এন৯৫ মাস্ক যারা দিয়েছিল, সেই জেএমআই থেকে এবার টিকার সিরিঞ্জ নেওয়া হচ্ছে। কোম্পানিটি এত শক্তিশালী! কোনও রাঘববোয়ালকে ধরা হয়নি। আদালত কর্তৃক প্রতারক ঘোষিত শাহেদ হাসপাতালের জন্য কী করে চুক্তি করে।’

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণায় বেশি আত্মনিয়োগ করা উচিত। গবেষণার জন্য বরাদ্দ বেশি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিশেষায়িত সেবার ক্ষেত্রে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দুর্নীতি কমানো দরকার। মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা দরকার।’ গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি সংবাদে আসছে। কারা করছে? এই দুঃসাহস কীভাবে পায়? যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সব দোষ আসে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমলাদের কিছু হয় না। তারা এত শক্তিশালী! অথচ দুর্নীতি হয় প্রকল্প পরিচালক লেভেলে। আজ পর্যন্ত একজন সচিব বা প্রকল্প পরিচালকের কিছু হয়নি।’ এসব বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্তা নেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগ বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন খুব তাড়াতাড়ি সংসদে আনবো। অনেকে বলেন, করোনায় অব্যবস্থাপনা আছে। করোনার বিষয়ে শুরুতে কেউ কিছু জানতো? যখন জানা গেল, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনাকালে রোগীর পেছনে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। যারা আইসিইউতে ছিলেন, ৫০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন খরচ হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দেইনি। সবচয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পেয়েছি। চুক্তিতে আছে, ভারত যে দামে নেবে আমাদেরও সেই দামে দেবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। সেইভাবে টিকা পেয়েছি।’