সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি::
প্রতিবছর শীতের শুরুতেই সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেয় পরিযায়ী পাখি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, রক্ত জমাট ঠাণ্ডার দেশ থেকে একটু উষ্ণতার খোঁজে এদেশে এসে শিকারীদের কবলে পড়ছে পাখিগুলো।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় রাতের আঁধারে ফাঁদ পেতে মারা হচ্ছে অতিথি পাখি। শিকারের কৌশল হিসেবে বিলের মধ্যে ধানক্ষেত বা মাছের ঘেরের পানিতে বাঁশ পুঁতে রেখে ফাঁস জাল টানিয়ে রাখা হয়। আবার কখনো বিলের মধ্যে লোহার চিকন তার দিয়ে পাতা হয় ফাঁদ।
গভীর রাত আর কুয়াশা ঢাকা ভোরে এসব ফাঁদে বেঘোরে প্রাণ হারায় পাখিরা। আর সুযোগ বুঝে ধারেকাছে ওঁৎ পেতে থাকা শিকারীরা ফাঁদে আটকে পড়া পাখিগুলোকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এসব ফাঁদ ছাড়াও বিশেষ এক ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করেও পাখি ধরা হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ইয়ারগানও।
অব্যাহত নিধনের ফলে জেলার আশ্রয়স্থলগুলো এখন অতিথি পাখিদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাঁদ পেতে পাখি মারা হচ্ছে সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা বিল, খড়িয়াডাঙা বিল, ধুলিহর এলাকার আছানডাঙা বিল, কোমরপুর বিল, এল্লাচর ও বকচরায়। আর আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার ঘেরগুলোতে, কলারোয়া ও তালাসহ সীমান্তবর্তী এলাকার বিলগুলোতেও বিভিন্ন পদ্ধতিতে চলছে পাখি শিকার।
প্রতিরাতে সাতক্ষীরা সদরের খড়িডাঙ্গা বিলে বিশেষ সাউন্ড সিস্টেম, ফাঁস জাল ও ইয়ারগান ব্যবহার করে পাখি শিকার করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
প্রশাসনের যথাযথ হস্তক্ষেপ না থাকায় দিনে দিনে বেড়ে চলেছে এই অপরাধ প্রবণতা।
তালা উপজেলার নওয়াপাড়া , ধলবাড়ীয়া, কলিয়া ও লক্ষণপুর গ্রামের মাঝখানে বাগের বিল অবস্থিত। এই বিলের অন্তত চারটি পয়েন্টে ফাঁস জাল ও লোহার তারের বিশেষ ফাঁদ পেতে পরিযায়ী ও নিশাচর পাখি ধরতে দেখা গেছে শীত শুরু হতে না হতেই। উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের টিআরএম প্রকল্পের পাখিমারা মধুখালি বিলে টানানো হচ্ছে কারেন্ট জাল।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ী পাখি শিকার অথবা হত্যা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
তবে জেলায় সে আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ চোখে পড়েনি। স্থানীয় প্রশাসন সচেষ্ঠ হলে পাখিগুলোকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘অতিথি পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। শীত মৌসুমে এই অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনেকে বিষয়টি বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই বিলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া, যারা পাখি শিকার করেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সকল পাখি শিকারীকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনা হবে।’