চসিক নির্বাচন সম্পন্ন # বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় নিহত ১, আহত ৩০# এক মেয়র প্রার্থীর ভোট বর্জন
বিশেষ প্রতিনিধি
বুধবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে মর্যাদার লড়াই শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। রাত ৮টায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের ফলাফল চিত্রে দেখা যায়, ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৭টির ফলাফলে রেজাউল করিম পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬ ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ২১ হাজার ৩২৩ ভোট। তবে নির্বাচনী কন্ট্রোল রুম থেকে এ পর্যন্ত ২২১ ভোট কেন্দ্রের ফলাফল জানানো হয়। এ ফলাফলে নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৭৯০। বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৯৮ ভোট। ঘোষণাকালে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে বিজয়ের ঘোষণা নৌকা প্রার্থীর অনুকূলে আসছিল। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চসিকের এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নৌকার রেজাউল করিম জয়রথে। এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে জয়লাভ নিশ্চিত হয়েছে ৭ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের। বিএনপি সমর্থিত কোন কাউন্সিলর জয়ী হওয়ার খবর মিলেনি। এদিকে, মেয়র পদে অপর ৬ প্রার্থীর মধ্যে একজন ভোট বর্জন করেছেন। নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির পার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন। তিনি ভোট বর্জন করেননি, ভোট শেষে নির্বাচনও প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে ভোটে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। এক কথায় বলেছেন, প্রহসনের ভোট হয়েছে। উল্লেখ্য, চসিকের মেয়র পদে এটাই ছিল দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোট। নির্বাচনে মোট ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এক ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভোট চলাকালে কয়েকটি ওয়ার্ডের ৭ কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সহিংস ঘটনায় ১ জনের প্রাণহানি ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে একটি কেন্দ্রে আরও একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক ভাইয়ের হাতে আরেক ভাই খুন হয়েছেন। এটি নির্বাচনী সহিংসতা না পারিবারিক ঘটনার জের তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ নির্বাচন ছাড়া চসিকের ইতোপূর্বেকার নির্বাচনের দিন কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনা বাদে এ নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। মূলত বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল উত্তাপ। ভোটাধিকার প্রয়োগের হার অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মতব্যক্ত করা হয়েছে। বুধবারের এ নির্বাচনে ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে দুটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়নি। এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। মূলত সহিংসতার এসব ঘটনা ঘটেছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে। সকাল ৮টা থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পথিমধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইভিএম ভাংচুরের ঘটনায় দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল হোসেন বালিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। ৪টার পর পরই শুরু হয় গণনা। এতে এ নির্বাচনের প্রধান আকর্ষণ দলীয় প্রতীকের মেয়র পদ। এ পদে ৭ প্রার্থী থাকলেও একজন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন এবং পুনঃনির্বাচন দাবি করেন। তিনি ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জান্নাতুল ইসলাম। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন হাতপাখা প্রতীকে।
বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত প্রাপ্ত বেসরকারী ফলাফলের প্রাথমিক চিত্রে দেখা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বড় ধরনের ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী পুরো সময় তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে ছিলেন। ভোটগ্রহণ শেষে ডাঃ শাহাদাত হোসেন দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে বলেন, আগে ব্যালটে জালিয়াতি হতো। এখন ইভিএমে জালিয়াতি হয়েছে। এ সরকারের আমলে ভোটের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। এর আগে নির্বাচন চলাকালে দুপুরের দিকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় এবারের চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ট্র্যাডিশনাল জালিয়াতির ভোট চলছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ নির্বাচনে বিএনপি বিভিন্ন কেন্দ্রে প্যানিক সৃষ্টি করেছে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় দিনব্যাপী ভোট চলাকালীন সময়ের চিত্রে দেখা যায়, কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা বাদ দিলে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। মেয়র পদের ভোটে পরিবেশ মোটামুটি সুষ্ঠু থাকলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বড় ধরনের অপ্রীতিকর ছাড়াই ভোটগ্রহণ হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেনের। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলাফল যাই হোক মেনে নেবেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল।
চসিক নির্বাচনে একযোগে ৭৩৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। শুরুতেই প্রতিটি কেন্দ্রে দেখা যায় দুই মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের ভিড়। পরিবেশও শান্তিপূর্ণ ছিল। সকাল ৯টার পর থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে আসতে থাকে কিছু কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একটি কেন্দ্রে গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। আরেকটি কেন্দ্রে ছুরিকাঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গোলাগুলিতে নিহত ১:
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুল ভোট কেন্দ্রে ঘটে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং একইদলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমান অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এতে গুলিবিদ্ধ হন আলাউদ্দিন নামের একজন। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকায়। গুলিবিদ্ধ আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই কেন্দ্রে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় ৮ জন আহত হন। বিক্ষুব্ধরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে একটি মোটরবাইক জ্বালিয়ে দেয়।
এছাড়া লালখান বাজার চানমারি রোডের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের এ সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষ তখন হকিস্টিক এবং লাঠিসোটার ব্যবহারও দেখা যায়। সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল নিজেও আহত হন। বিজিবি ও পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভাইয়ের হাতে ভাই খুন:
মহানগরীর পাহাড়তলী বার কোয়ার্টার এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে নৃশংস একটি হত্যার ঘটনা। সেখানে ভাইয়ের হাতে খুন হন আরেক ভাই। তবে ঘটনাটি নির্বাচনী সহিংসতা কিনা তা পরিষ্কার নয়। নিহত মোঃ নিজামউদ্দিন এবং তার ভাই কামরুল ইসলাম ছিলেন সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক। বড় ভাই কামরুল খুন করে ছোট ভাই নিজামকে। পুলিশ বলেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল, যার জের ধরে এ হত্যাকা-। পরিবারের সদস্যরাও বলেছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। এ দুই ভাইয়ের মধ্যে নিজাম ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমেদের সমর্থক। আর কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নুরুল আমিনের সমর্থক।
নিহত নিজাম উদ্দিনের মা জিন্নাত আরা বেগমের বিলাপ করা কান্নায় ভারি হয়ে উঠে সেখানকার পরিবেশ। এই মা নিজেই বলেছেন, তার ছোট ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার এ পুত্রের স্ত্রী বোবা। তাদের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। এখন এই দুটি সন্তান নিয়ে বোবা মেয়েটি কোথায় যাবে। তিনি এই হত্যাকা-ের জন্য তার বড় ছেলের ফাঁসি দাবি করেন। উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুকুল ইসলাম সাংবাদিকদের খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এটি নির্বাচনী সহিসংতা নাকি দুই ভাইয়ের একান্ত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইভিএম ভাংচুর, কাউন্সিলর প্রার্থী আটক:
চসিক নির্বাচনে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি ভোট কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ ইসমাইল বালির কয়েক শ’ সমর্থক আচমকা হামলা চালিয়ে ইভিএম ভাংচুর শুরু করে। আক্রমণকারীরা ভোট কেন্দ্রের তিনটি ইভিএম ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে তিনটি বাসসহ বেশকিছু গাড়িও ভাংচুর করা হয়। পুলিশ দ্রুত এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। হামলার কারণে ওই কেন্দ্রে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। চসিকের এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনুপ খাস্তগীর এবং বিএনপি সমর্থিত মোঃ ইসমাইল বালি। ঘটনার পর পুলিশ ইসমাইল বালিকে আটক করে।
দুই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত:
হামলা এবং ইভিএম ভাংচুরের কারণে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই কেন্দ্রে হামলাকারীরা চারটি ইভিএম মেশিনের মধ্যে তিনটিই ভেঙ্গে ফেলেছে। এ অবস্থায় ভোটগ্রহণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। সেগুলো হচ্ছে- সরাইপাড়া, আমবাগান, দক্ষিণ কাট্টলী, পাহাড়তলী, পাথরঘাটা ও আসাদগঞ্জ। ভোটার উপস্থিত কাক্সিক্ষত পর্যায়ের না হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রের পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক।
শান্তিপূর্ণ ভোট, বললেন রেজাউল:
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বহদ্দারহাটের এখলাসুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ভোট দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ নেতারা। সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। আশা করি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেরই জয় হবে। তবে ফলাফল যাই হোক না কেন মেনে নেব। বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযোগ করা বিএনপির পুরনো অভ্যাস।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মহানগরীর আন্দরকিল্লায় অবস্থিত এমইএস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট হচ্ছে, তাই ভোট ছিনিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সকাল ৮টার দিকে কদম মোবারক এমআই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। আর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি সকাল ৯টায় তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন লালখান বাজার শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে, বললেন শাহাদাত:
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন সকাল ১০টার দিকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বাকলিয়ায় বি.এড কলেজ কেন্দ্রে। ভোট দেয়ার পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ বলতে যা বোঝায় তা নষ্ট করেছে আওয়ামী লীগ। ভোট দিতে আসা নারীদের পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির যে ভোটাররা ভোট দিতে এসেছিল তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত।
প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে বিএনপি- অভিযোগ আওয়ামী লীগের:
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নানাভাবে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল। তিনি বলেন, সকাল থেকে অনেক কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তাদের ভোট দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপির কর্মীরা কিছু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয়ে দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিটি নির্বাচনেই এমন প্রোপাগান্ডা চালায়। কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও কোথাও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে বিশ^াসী। কিন্তু বিএনপিই বরং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে থাকে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের যে ৭ জন বিজয়ী:
আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন ১২ জন। এদের মধ্যে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত ৭ জন বিজয়ী হয়েছেন। এরা হলেন ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে শাহেদ ইকবাল বাবু, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে সফিকুল ইসলাম, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে এসরারুল হক, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহুরুল আলম জসিম, ৩৩ ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে মোরশেদ আলী।