বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এরই মধ্যে সেখানে নির্বাচনী সহিংসতায় কয়েকজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কিছু মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আরও সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন একজন নির্বাচন কমিশনারসহ অনেক প্রার্থীও। নানান কারণে তাদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, সুষ্ঠুভাবে চসিক নির্বাচন নাও হতে পারে।
নির্বাচনের দুইদিন আগে কমিশনার মাহবুব তালুকদার চসিক নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রকাশ্যেই। তিনি বলেছেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের কার্যকালের অবশিষ্ট সময়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা ও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। আমরা জনগণের মনে নির্বাচনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সামিল হতে চাই।’
তবে মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে একমত নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, চসিক নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু প্রতিহিংসা যেন না হয়। যদিও এরই মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এটা কাম্য হতে পারে না।’
এমন পরিস্থিতিতে আসলে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না; নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত হবে? যদিও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যকে মাঠে নামানো হয়েছে। কিন্তু মোট ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে যখন ৪২৯টি (৫৮ শতাংশ) কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়, সেখানে নিশ্চিন্তে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। আর কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন ২২৫ জন প্রার্থী। ভোটারের সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। সহিংসতার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি এই কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। কেননা এখন পর্যন্ত যতগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার সিংহভাগই কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মি-সমর্থকদের মধ্যে।
তাই মাহবুব তালুকদারের ‘এই নির্বাচন কমিশনের কার্যকালের অবশিষ্ট সময়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন’ – এমন বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। এর আগ পর্যন্ত এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে হওয়া বেশির ভাগ নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীদল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। যে কারণে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন পরিস্থিতি এই কমিশনের সামনে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ করে দেখানোর এটা একটা বড় সুযোগ।
আমরা মনে করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচনে সেই সুযোগটা নেবেন। নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করে জনগণের ‘আস্থা’ ফেরাতে দৃষ্টান্ত রাখবেন।