টাইগারদের কাছে বাংলাওয়াশ উইন্ডিজ

0

স্পোর্টস রিপোর্টার

সাগরিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সবকটি জিতে উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিলো বাংলাদেশ। ২৯৮ রানের বড় লক্ষ্যের বিপরীতে জয়ের লক্ষ্যে না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোভম্যান পাওয়েল। তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। ৪৭ রানে ব্যাট করতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে সৌম্য সাজঘরে ফেরানোর পরেই দ্রুত গুটিয়ে গেছে ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডে জিতেছে ১২০ রানে।

সোমবার সিরিজের শেষ ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৬৪*), মুশফিকুর রহিম (৬৪), তামিম ইকবাল (৬৪) ও সাকিব আল হাসানের (৫১) ফিফটিতে ভর করে ২৯৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৭ রানে উইকেট হারায় উইন্ডিজ। সিরিজের তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ দলকে ব্রেক থ্রু উপহার দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন কেজর্ন ওটলি। ওটলিতে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করছিলেন মোস্তাফিজ। সুইং করে বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। কিন্তু লাইন ধীরে ধীরে ব্যাটসম্যানের কাছে নিয়ে আসছিলেন। ওভারের শেষ বলটা ছিল সবচেয়ে কাছে, উইকেট আসে সেটাতেই। খোঁচা মেরে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন ওটলি। ৮ বলে এই ওপেনার করেন ১।

দলীয় ৩০ রানে ক্যারিবিয় শিবিরে ফের মোস্তাফিজের আঘাত। ওপেনার সুনীল এমব্রিসকে (১৩) এলবির ফাঁদে ফেলেন কাটার মাষ্টার। দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন কাইল মেয়ার্সকে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে মিডল স্টাম্পে লাগত বল। নষ্ট হয় একটি রিভিউ।

দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই বাজিমাত সাইফউদ্দিনের। পরপর দুই ওভারে ফেরালেন ক্যারিবিয় দুই সেট ব্যাটসম্যানকে। প্রথমে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে জেসনকে (১৭) ফিরিয়ে ভাঙেন ৬৭ বল স্থায়ী ৩২ রানের জুটি। নিজের পরের ওভারেই দুর্দান্ত বোলিংয়ে এনক্রুমা বনারের (৩১) স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছেন।

শেষ দিকে পাওয়েল প্রতিরোধ গড়লেও তাকে এলবিডাব্লিউ করেছেন সৌম্য। এরপর দ্রুত সাজঘরে ফিরেছেন বাকিরা। ফলাফল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৪.২ ওভারেই অলআউট ১৭৭ রানে।

এর আগে সাগরিকায় হাফসেঞ্চুরির পসরা মেলে বসেছেন টাইগাররা। তামিম, সাকিব, মুশফিকের পর দলে যোগ দিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই চার সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট খুঁইয়ে ২৯৭ রান করেছে বাংলাদেশ। রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

উইন্ডিজদের হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের শুরুতে প্রথম ওভারেই নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন টাইগার ওপেনার। ৪ বল খেলে কোন রান না করেই ফিরলেন তিনি।

তিনে আবারও ব্যর্থ হয়েছেন শান্ত। কোচের আশা ভরসার প্রতিদান দিতে পারলেন না তিনি। প্রথম ম্যাচে ১ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৭ রান ও শেষ ম্যাচে শান্ত আউট হয়েছে ২০ রানে। কাইল মেয়ার্সের ডেলিভারিতে এলবির শিকার হয়ে ৩০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।

প্রথম দিকে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে সাকিব-তামিমের ব্যাটে। দুজনের ৯৩ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৪৪ পরের ম্যাচে ৫০ করার পর তৃতীয় ম্যাচেও অর্ধশতক হাঁকিয়েছে তামিম। অর্ধশতকের পর ইনিংস বড় করতে হাত খুলে মারতে চেয়েছিলেন টাইগার ওপেনার। কিন্তু ক্যারিবিয় পেসার জোসেপের ট্রাপে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন ঘরের ছেলে তামিম। ৮০ বল খেলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ওভার বাউন্ডারিতে তামিমের ঝুলিতে এসেছে ৬৪ রান।

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই চেনা ছন্দে সামিল হলেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিষেধাজ্ঞার আগে সাকিবের সর্বশেষ ওয়ানডে ছিল আইসিসি বিশ্বকাপের পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। সেই ম্যাচে পাক বোলারদের তুলোধুনা করে ৭৭ বলে ৬৪ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব। এরপরেই দেশে ফিরে ভারত সফরের আগেভাগেই নিষেধাজ্ঞার কবলে সাকিব। সেই সাকিব নিজেকে প্রস্তুত করে ফিরেছেন নতুনভাবে।

দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাকিবের ব্যাট তার পক্ষেই কথা বলে। প্রথম ম্যাচে ১৯ করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৩ রান ও তৃতীয় ম্যাচেই সাকিব পায় হাফ সেঞ্চুরির দেখা। যদিও হাফ সেঞ্চুরি করেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন সাকিব। ৮১ বলে খেলে তুলেছেন ৫১ রান। রেইফারের বলে বোল্ড হন সাকিব।

সাকিব ফিরলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে বড় জুটি গড়েন মুশি। এই জুটিতে দলীয় রান ২০০ ও ২৫০ স্পর্শ করে। এর ভেতরেই মুশফিকুর রহিম তুলে নেন নিজের ৩৯তম অর্ধশতক। অন্য প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত সমর্থন দেন রিয়াদ। কিন্তু শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাট করতে গিয়ে মুশফিক ফেরেন ৫৫ বলে ৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। মুশি তার ইনিংস সাজান ৪টি চার ও দুটি ছয়ে।

এরপর রিয়াদ অর্ধশতক তুলে নেন। শেষ দিকে সৌম্য (৭) রান আউট হলেও মাত্র ৪৩ বলে তিনটি চার ও তিনটি ছয়ে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন রিয়াদ।

উইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন আলজারি জোসেপ। ১০ ওভারে ৪৮ রানে দুটি উইকেট তার। আর রেমন রেইফ্রি ১০ ওভারে ৬১ রান দিয়ে নেন দুটি। এছাড়া একটি উইকেট নেন কাইলা মায়ার্স।

ব্যাটে বলে সমান পারফরম্যান্সে ম্যান অফ দ্যা সিরিজের পুরষ্কার উঠেছে সাকিব আল হাসানের হাতেই।

এই ম্যাচে অনন্য এক বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে যেকোনো এক দেশের মাটিতে ৬ হাজারের বেশি রান ও ৩০০ উইকেটের রেকর্ডের মালিক শুধুই সাকিব। বিশ্বের আর কোনো ক্রিকেটারের এই রেকর্ড নেই। সাকিব এই রেকর্ড গড়েছেন নিজ দেশের মাটিতে। ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল ভারতের মাটিতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪ হাজারের বেশি রান ও ৩০০ উইকেট শিকার করেছেন।

তামিম ইকবালও একটি রেকর্ড গড়েছেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ওয়ানডেতে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে চট্টগ্রামের তামিমের রান ছিল ৪৯৭। এই ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত ১৫টি ওয়ানডে খেলে ৫৬১ করেছেন তামিম।