এবার অন্তত কথা রাখুক মিয়ানমার

9
Spread the love

বাংলাদেশের উপর ‘জগদ্দল পাথর’ হয়ে চেপে বসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে সচিব পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের পরেই মূলত নতুন এমন আশার কথা শুনিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ওই বৈঠকে মিয়ানমারকে ‘গ্রামভিত্তিক’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব দেওয়ার পর তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী এপ্রিল-জুনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করা যাবে। যদিও তিনি আরও আগে প্রত্যাবাসন শুরুর পক্ষে ছিলেন। তবে মিয়ানমারের অনুরোধে তা পিছিয়ে এপ্রিল-জুন করা হয়েছে। এর আগেও আমরা কয়েকবার এমন আশার কথা শুনেছি। বিশেষ করে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মিয়ানমার ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েছিল। বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটি তালিকাও তাদেরকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি দেশটি। আর কথার বরখেলাপের জন্য তাদের ওপর কোনো চাপও প্রয়োগ করেনি জাতিসংঘ।

মিয়ানমারের এমন একগুঁয়েমির মধ্যে গত বছরের পুরোটা সময়ই শেষ হয় কোভিড-১৯ মহামারিতে। এসব কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সব আলোচনা বলতে গেলে বন্ধই ছিল। নতুন আলোচনায় চীনের উপস্থিতি বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক পরিম-লে মিয়ানমার চীনের ভালো বন্ধু এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলও বটে। আবার বাংলাদেশের সঙ্গেও চীনের সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই হিসাবে একটা সমাধানসূত্র খুঁজছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে গণধর্ষণ, গণহত্যা আর অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক আর বর্বর নির্যাতনের ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নানান সীমাবদ্ধতার পরও প্রায় সাড়ে ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে এখনও আশ্রয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। এই সাড়ে ৮ লাখ ছাড়াও আগে থেকে আরও অন্তত সাড়ে ৪ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে ছিল। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১৩ লাখ রোহিঙ্গার ভার আর সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ। তাই খুব দ্রুত এই বোঝা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নিতে হবে। এর মধ্যে আবার রোহিঙ্গারা নিজেরাই আরেক সমস্যা তৈরি করেছে। তথাকথিত নিরাপত্তার অজুহাতে তারা নিজ দেশে ফিরতে চায় না। এ যেন ‘মামা বাড়ির আবদার’।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আজকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব ‘গ্রামভিত্তিক প্রত্যাবাসন’ শুরুর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে চমৎকার। একই গ্রামে আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে এক সাথে পেয়ে রোহিঙ্গারাও যেমন উৎসাহবোধ করবে; তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার যে ভয়- সেটাও কমে আসবে। আবার মিয়ানমারের পক্ষেও প্রত্যাবাসন ব্যবস্থাপনার কাজ সহজ হবে।

আমরা মনে করি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে মিয়ানমার। আর কোনো অজুহাত না দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেবে তারা। বাংলাদেশকে এই ‘জগদ্দল পাথর’ থেকে মুক্তি দেবে দ্রুত।