রয়েছে দোতলা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ॥
যশোরের মণিরামপুরে (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) ভিজিডির তালিকায় সীমাহীন অনিয়ম ধরা পড়েছে। তালিকায় রয়েছে দোতলা বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকারের স্ত্রী, ইউনিয়ন পরিষদের সম্পদশালী উদ্যোক্তার স্ত্রী, নারী ইউপি সদস্যর মেয়ে ও গ্রাম পুলিশের স্ত্রীর নাম। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া তালিকা জরিপ করে এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে। জমাপড়া তালিকা থেকে ১৯১টি নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কমিটি।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে রোহিতা, ভোজগাতী, হরিদাসকাঠি, খেদাপাড়া, ঝাঁপা, চালুয়াহাটি, শ্যামকুড় ও মনোহপুর ইউনিয়নে। তবে স্বচ্ছ তালিকা জমা দিয়েছেন মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিস্তার ফরুক। তদন্ত করে তার তালিকায় কোন অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার।
রোহিতা ইউপির নামগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, ওই তালিকায় রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসর নেওয়া কাশিমপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বিথির নাম। রফিকুল দোতলা বাড়ির মালিক এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য শিল্পির চাচাতভাই। রোহিতা ইউপির উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খাতুনের নামও রয়েছে তালিকায়। রুবিনা নিজেই ওই ইউপির উদ্যোক্তা। আনোয়ার হোসেন রোহিতা বাজারের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট। কয়েকলাখ টাকা খাটিয়ে তিনি এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছেন। সম্প্রতি নিজের ভিটেয় শুরু করেছেন তিনতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি নির্মাণের কাজ। এই উদ্যোক্তার পিতা নূরকরিমের নাম রয়েছে ৪০দিনের কর্মসূচির তালিকায়। এছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে মহিলা মেম্বর মঞ্জুয়ারা বেবির মেয়ে দীপার নাম। রয়েছে গ্রামপুলিশ নির্মলের স্ত্রী ছবিতা রানীর নামও। তালিকায় অনিয়ম দেখে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
কাশিমপুর ওয়ার্ডের মেম্বর আমিনুল ইসলাম শিল্পি বলেন, কিভাবে দোতলা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম তালিকায় ঢুকেছে বলতে পারব না। কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের মেম্বর মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিষদে সবাই বসে উদ্যোক্তা আনোয়ারের স্ত্রীর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান আনছার সরদার বলেন, আমি কিছু জানিনা।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম বলেন, সরেজমিন রোহিতা ইউপির ভিজিডির তালিকা তদন্ত করে দোতলা বাড়ির মালিকসহ একাধিক ছাদের বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও স্বচ্ছল পরিবারের নাম পাওয়া গেছে। মোট ২০৫টি নামের মধ্যে ১৬টি অনিয়ম পাওয়া গেছে।
মহিলা বিষয়ক অফিসের তথ্যমতে, রোহিতা ইউপির ১৬টি, কাশিমনগরের ২টি, ভোজগাতীর ১৭টি, ঢাকুরিয়ার ৪টি, হরিদাসকাঠির ১৫টি, খেদাপাড়ার ১১টি, হরিহরনগরের ১৩টি, ঝাঁপার ১৮টি, মশ্মিমনগরের ৯টি, চালুয়াহাটির ২৩টি, শ্যামকুড়ের ২৫টি, খানপুরের ৯টি, দূর্বাডাঙ্গার ৯টি, কুলটিয়ার ৪টি, নেহালপুরের ৫টি ও মনোহরপুর ইউপির তালিকায় ১১টি অনিয়ম পাওয়া গেছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, এলাকা ঘুরে জরিপ করার কথা থাকলেও কয়েকটি ইউনিয়নের তালিকা পরিষদে বসে দায়সারা যাচাই করা হয়েছে। ওই ইউনিয়নগুলোতে সরেজমিন তদন্তের দাবি স্থানীয়দের।
মণিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার বলেন, ২০২১-২২ চক্রে দুই হাজার ৭১৭ জন ভিজিডি পাবেন। বিভিন্নি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যানরা যে তালিকা জমা দিয়েছেন তা যাচাই করে ১৯১টি অনিয়ম পাওয়া গেছে। কোন অভিযোগ থাকলে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জানানোর জন্য তিনি এই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, অনিয়ম থাকলে অধিকতর যাচাইয়ের জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।