মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের হলরুম ভাড়া দিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, প্রতিটি ভাড়ার টাকা রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে ব্যাংকের চালান রশিদ সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও তার তোয়াক্কা না করে পুরোটাই হজম করা হচ্ছে। ইউএনও অফিসের নাজির সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার ভাগ পায় সাইফুল।
তবে সাইফুল টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আর ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান বলছেন, হলরুমের অর্জিত আয় রুমের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। যদিও কয়মাস আগে পরিষদের হলরুমের উন্নয়নে মাসিক সমন্বয়সভায় দুই লাখ টাকার রেজুলেশন করা হয়েছে।
কয়েকবছর আগে মণিরামপুরের সাবেক ইউএনও অতুল ম-লের আমলে মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা পরিষদের হলরুমের ভাড়া দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরিষদের বাইরের কেউ এই রুম ব্যবহার করতে চাইলে ইউএনও বরাবর আবেদনের মাধ্যমে প্রতিটি সভা বা সেমিনারের জন্য তাকে এই টাকা দিতে হবে। ভাড়ার টাকা রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে ব্যাংকের চালান রশিদ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়। সেই থেকে পরবর্তী দুই ইউএনওর আমলে নিয়মটি অনুসরণ করা হয়। গতবছরের জুন মাসে মণিরামপুরে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন সৈয়দ জাকির হাসান। তিনি আসার পর কোন আলোচনা ছাড়াই হলরুমের ভাড়া দেড় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করেন। এরপর এই পর্যন্ত প্রায় ১৫-২০ বার হলরুম ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ইউএনও অফিসের সহকারী (নাজির) সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষর করে টাকা আদায় করেন। আদায়কৃত সমুদয় টাকা রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন ইউএনও অফিসে গিয়ে সাইফুলের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। তিনি ভাড়া সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তার কাছে ভাড়ার ব্যাপাওে কোন রেজিস্ট্রার নেই; নেই কোন চালান রশিদ।
এই ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে দুইটা ভাড়ার তথ্য আছে। হলরুম ভাড়া নেওয়ার জন্য যারা আবেদন করেছেন সেই আবেদন সংরক্ষণ করা হয়নি। আয় সংক্রান্ত কোন তথ্য লিখিত আকারে রাখিনি। দুইবারে ভাড়ার টাকা রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে হলরুমের মধ্যে প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করানো হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘জানামতে, হলরুমের ভাড়া দেড় হাজার করে নির্ধারিত। ভাড়া নেওয়ার আগে ইউএনও বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। আদায়কৃত ভাড়া রাজস্বখাতে জমা দিয়ে ব্যাংকের চালান সংরক্ষণ করবে ইউএনও অফিস। ভাড়া বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করার বিষয়ে আমার জানা নেই।’
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘মূখ্য কর্মকর্তা হিসেবে হলরুমের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষমতা আমার আছে। যা আয় হয়েছে তা হলরুমের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, দুইবারের ভাড়া যে ১০ হাজার টাকা আয় হয়েছে সেটা ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে।’ এসব ছোটখাট বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ইউএনও এই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন। এই বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ দিয়ে দেখছি।