খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
দেড় বছর পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারি সত্ত্বেও দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশের বাজারে চালের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় চাল আমদানির সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার (৯ জানুয়ারি) হিলি দিয়ে দেশে ঢুকলো আমদানির চাল। এদিকে দীর্ঘদিন পর বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরতে শুরু করেছে।
শনিবার বিকেল ৪টায় ভারত থেকে ৩টি ট্রাকের মাধ্যমে ১১২ টন চাল দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বন্দর দিয়ে দীর্ঘ দুবছর পর চাল আমদানি শুরু হয়েছে। হিলি কাস্টমসের তথ্য মতে, এর আগে সর্বশেষ ৩০ মে ২০১৯ সালে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হয়েছিল। এরপর চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৬২.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সেসময় চালের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। তবে করোনার বছরে শুরুর দিকে দুস্থ ও গরিবদের সরকারের পক্ষ থেকে ১০ টাকা দরে চাল বিতরণসহ ঠিকমতো নজরদারি করা সম্ভব না হওয়ায় চালের দাম নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে মিল মালিক ও পাইকারি-খুচনা ব্যবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নানা সময়ে হুঁশিারি ও উদ্বেগ জানানো হলেও এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঠানো হলেও চালের দাম এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বর্তমানে বাজারে মোটা চালও কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০১৯ সালে এই চালের দাম ছিল ৩৫- ৪০ টাকার মধ্যে। ফলে চাল ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষুব্ধ সরকার প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি ২০১৯ সালে বাড়ানো চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রথমে ২৫ ও পরে ১৫ শতাংশ করে। এরপর চলমান জানুয়ারি মাসের ৩ ও ৫ তারিখে দুদফায় হিলিসহ দেশের ২৯ জন চাল আমদানিকারককে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়।
হিলি স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিক সাইদুল ইসলাম ও সেলিম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজ শনিবার থেকে বন্দর দিয়ে আবারও চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এতে আমাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে।
চাল আমদানির কার্য সম্পাদনকারী হিলি স্থলবন্দরের সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট আলহাজ জয়নাল আবেদিনের সত্ত্বাধিকারী শেরেগুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার আমদানিকারক নওগাঁর মেসার্স জগদিশ চন্দ্র রায় খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১১২ নম্বর স্মারকের মাধ্যমে ভারত থেকে ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। এর মধ্যে আজ তিনি ৩টি ট্রাকে ১১২ টন চাল আমদানি করেছেন। ভারতীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মারুতি ইন্টারন্যাশনাল এই চালগুলো রফতানি করছেন। প্রতি মেট্রিক টন চাল ৩৫৬ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হয়েছে। বর্তমানে কাস্টমসে চাল ছাড়করণের প্রক্রিয়া চলছে। এটি সম্পন্ন হলে এসব চাল দেশের বাজারে সরবরাহ করা হবে।’
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। আজ ৩ ট্রাকে ১১২ মে. টন চাল এসেছে। আমদানি করা চাল দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে ছাড় করতে পারেন আমদানিকারকরা সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।