বাংলাদেশের সাহিত্যের অঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম রাবেয়া খাতুন। পঞ্চাশের দশকে বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে যে কয়জন গুণী মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল, রাবেয়া খাতুন তাদেরই একজন। প্রায় ছয় দশকের বেশিসময় ধরে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ ছিল সব্যসাচীর মতো। সবাই শোক সাগরে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন এই মহীয়সী নারী। দেশের শিল্প সাহিত্য অঙ্গন থেকে শুরু করে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সিনেমা অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের নামাজে জানাজা দুপুর তিনটায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে তাকে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় বনানী কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে। তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মধ্যবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে রাবেয়া খাতুন নানা টানাপড়েন, উত্থান-পতন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাঁকগুলি পর্যবেক্ষণ করেছেন সময়ের পরিক্রমায়। তার সেই সুতীব্র পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে তার নানা সাহিত্যকর্মে, যা বায়ান্ন গলির এক গলি, মধুমতী, অনন্ত অন্বেষা, রাজারবাগ-শালিমারবাগ, ফেরারী সূর্য, নীল নিশীথ, মোহর আলী, হানিফের ঘোড়াসহ নানা সাহিত্যকর্ম পাঠ করলে বোধগম্য হয় সহজেই। যেকোনো শ্রেণির পাঠক স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, রাবেয়া খাতুনের পর্যবেক্ষণ সুষ্পষ্ট , জীবনবোধ গভীর, ভাষা সাবলিল ও শক্তিশালী, সংলাপ অত্যন্ত ধারালো এবং বাস্তব চরিত্র চিত্রণ বলিষ্ঠ। রাবেয়া খাতুন শুধু একজন বড়মাপের সাহিত্যিকই ছিলেন না, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন দায়িত্বশীলা গৃহিণী, সন্তান-অন্তঃপ্রাণ মা, আন্তরিক এবং বন্ধুবৎসল মানুষ। চারটি সুযোগ্য সন্তানের মা রাবেয়া খাতুনের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তারা এই গুণী নারীর মমতায় সিক্ত হয়েছেন। সাহিত্য অঙ্গনের এই নক্ষত্রের চিরবিদায়ে দেশে শিল্প-সাহিত্যের পাশাপাশি সুশীল সমাজে এক শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। যা আদৌ কখনো পূরণ হবে কিনা, তা জানা নেই। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।