কালীগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের এক সম্ভাব্য প্রার্থীর চমক

50
Spread the love

ইউনিয়নবাসী ভালোবাসায় একাট্টা ॥ শোডাউন গনসংযোগ চলছেই

সাবজাল হোসেন,বিশেষ প্রতিনিধি :

তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়াদের) প্রতি সরকারের রয়েছে বিশেষ দৃষ্টি। তাদেরকে ভোটার ও নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ কোটার ভাতাসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার ও নানা সুযোগ সুবিধা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের ওই ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে নজরুল ইসলাম রিতু। নিজে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অথবা দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন নেতা নয়। তবে সারাজীবন সমর্থন করেন। তার পরিবারের সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে রয়েছেন। তারপরও আ’লীগের স্থানীয় সাংসদের সাথে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। অনেক দিন স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন ঢাকায় কিন্ত নাড়ির টানে প্রায়ই এলাকায় আসেন। নিজ কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে রাস্তাঘাট সংস্কার, মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা, অসহায় দুস্থ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এ সকল জনকল্যানকর কাজের জন্য এলাকার মানুষ তাকে এ বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এলাকাবাসীর দাবী জনভীতের ওপর ভর করেই নজরুল ইসলাম রিতা আপুর নৌকা প্রতিক দাবি করছেন। এখনও নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা না করা হলেও ইউনিয়নের সকল শ্রেনীর জনগন তার পক্ষে কোমর বেধে লেগেছেন।

সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে গেলে দেখা যায়, তৃতীয় লিঙ্গের অর্থাৎ (হিজড়া সম্প্রদায়ের) নজরুল ইসলাম রিতু শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে এলাকায় মটরসাইকেল শো-ডাউনসহ সভা সমাবেশ ও গনসংযোগ করেই চলেছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম রিতুর দাবি, তিনি হিজড়া সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশের মধ্যে ২য় তম প্রার্থী হচ্ছেন। উল্লেখ্য,গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাশর্^বতী একই জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার পিংকি খাতুন নামে অন্য এক হিজড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময়ে তিনি দেশের তৃতীয় লিংগের প্রথম জনপ্রতিনিধির দাবি করেন। ফলে কালীগঞ্জের নজরুল ইসলাম রিতু তৃতীয় লিঙ্গের ২য় তম প্রার্থী। এদিকে এ উপজেলাতে ইউ’পি নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা এখনও হয়নি। কিন্ত নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে সকল ইউনিয়নে। এরই ধারা বাহিকতায় গনসংযোগ, বিপুল লোক সমাগম ঘটিয়ে লাগাতর ব্যাপক শোডাউন ও জনগনের সাড়ায় রিতু আলোচিত হয়ে উঠেছেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এলাকা থেকে কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে নজরুল ইসলাম রিতু তার শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে নিজ এলাকায় শোডাউন করেন। পরে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের দলীয় কার্ষালয়ে এসে স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারসহ নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় ছাড়াও দলীয় নৌকা প্রতিক দাবি করেন।

এলাকাবাসীর দাবি, সাধারন মানুষের জন্য নজরুল ইসলাম রিতু আপা দীর্ঘদিন এলাকায় নিজ গাটের টাকায় মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও রাস্তা সংস্কারে কাজ করছেন। এছাড়াও এলাকার দুঃস্থ অসহায় মানুষের পাশে থেকে সহযোগীতা করে আসছেন। ফলে তারা চাচ্ছেন রিতু আপা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনি আরও উন্নয়ন করতে পারবেন।

নজরুল ইসলাম রিতু আপা বলেন, তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান রিতু ৬ ভাইবোনের মধ্যে ৩য় সন্তান। তার ৩ ভাই ঢাকাতে থাকেন ও বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ ধরা পড়ে। বিশেষ কারনে মাত্র ৫ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো সম্ভব হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানার তৃতীয় লিঙ্গের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠেছেন। এখন তার বয়স ৪২ বছর। গুরুমার পরের দ্বায়িত্বটা তিনি পালন করছেন। তার দলে ৭০ জন হিজড়া রয়েছে। ঢাকাতে থাকলেও প্রায়ই তিনি তার গ্রামের বাড়ী এসে গরীব অসহায় মানুষের কল্যানে সেবা দিচ্ছেন। নির্বাচনের কথা নিজে কখনও ভাবেননি। কিন্ত এলাকাবাসীর দাবি ও ভালোবাসায় শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে মাঠে নেমেছেন। জনগন তার কাছে কিছুই চায়না। নিজের প্রতি জনগনের পাগলের মত ভালোবাসায় তিনি তাদের প্রতি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সাকিল আহম্মেদ জানান, রিতু আপা ঢাকাতে থাকলেও এখন তিনি বাড়িতে থাকেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় যান। আবার চলে এসে তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে নিজ জন্মস্থান দাদপর গ্রাম সহ ইউনিয়ন বাসীর উন্নয়নে সহযোগীতা করে থাকেন। এলাকার মাদ্রাসা ,মসজিদ মন্দির, এতিমখানা উন্নয়নে দান করেন। । এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্থ হয়েছে এমন খবর শুনলেই সেখানে ছুটে গিয়ে পাশে দাড়ান। তার কাছে গিয়ে কখনো কেউ বিমুখ হয়নি ফিরে আসেননি। তাই তার পক্ষে জনগন এবার কোমর বেধে লেগেছেন। কয়েক বছর আগে তার পিতার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।

নজরুল ইসলাম রিতু আরও জানান, সৃষ্টিকর্তা আমাকে যেভাবে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখিয়েছেন তাতেই আমি খুশি। আমার কোন সংসার নেই। এলাকার মানুষ আমাকে ভালবাসে। তাই আমার অর্জিত অর্থ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের কল্যানে ব্যয় করবো। মানুষসেবা করবো। আমি আওয়ামী ভাবাপন্ন পরিবারের সন্তান। নিজেও আওয়ামীলীগের সমর্থক। তাই আমি দলীয় প্রতিক নৌকা দাবি করছি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে। স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার ভাই সাথে আমার অনেক দিনের চেনা জানা। তিনি আমাকে ভালবাসেন। ফলে দলীয় মনোনয়ন আমি পাবো বলে আশাবাদী।