স্টাফ রিপোর্টার
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামে, ২৫টি কৃষক সংগঠনের শতাধিক কৃষক একত্রিত হয়ে ঐতিহ্য ধরে রাখতে দেড় বিঘা জমিতে ১০৫ প্রজাতির আমন ধানের গবেষণামূলক চাষ করছেন। প্লট আকারে সাড়ি বদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে চারাগুলি। মূলত বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের এ উদ্যোগ।
কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা লোকজ সার্বিক সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রসাদ সরকার বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মাটি লবণাক্ত হওয়ার কারণে বাজার থেকে যেসব জাতের ধানের বীজ কেনা হয়, সেগুলো থেকে ফলন ভালো পেতে অধিক পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তবে পুরনো আমলের যে বীজগুলো রয়েছে তাতে কম পরিচর্যা, সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করছেন তারা। কীটনাশকের প্রয়োজন হলে বালাই নাশক ও ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করেছি এই জাতগুলো টিকিয়ে রাখা দরকার। এগুলো সম্প্রসারণের দরকার। সেই লক্ষে আমরা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যে জাতগুলো পুরনো আমলে ছিলো, যে জাতগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে, এ রকম ১০৫ প্রজাতির ধান আমাদের কাছে আছে। এটা আমরা সংগ্রহ করি। আমাদের বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর গ্রামে একটি কৃষক সংগঠন আছে। তারা এটা পরিচালনা করে। এখন বাড়িতে জামাই আসলে পিঠা পায়েশ তৈরি হয়। বাজারের যে চাল দিয়ে তৈরি হয় তা ভালো হয় না।
কিন্তু এখানে যে ধান আছে, যেমন রানী সেলুট, চিনি কনাই, বাসমতি বিভিন্ন ব্যানাপোল ইত্যাদি সুগন্ধী চাল। যখন রান্না হয়, অন্য বাড়ির উঠান থেকে সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। স্বাদ ও মানুষের শরীরে যে জীবনী শক্তি প্রয়োজন তা বাজারের ধানের তুলনায় এসব ধানে বেশি। এ কারণে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এ প্রজেক্ট আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এটা আমরা সামনে দিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে কাজ করছি।
লোকজের সমন্বয়কারী পলাশ দাশ বলেন, প্রতি বছর মাঠ দিবসে এখানে ধান কাটা হয়। এলাকার শতাধিক কৃষককে দাওয়াত দেয় হয়। তখন কৃষকরা মাঠে এসে দেখে কোন জাতটা ভালো হয়েছে। তখন তার জমির জন্য কোন জাতটা ভালো হবে, সে এই ১০৫ প্রজাতির বীজের মধ্যে নির্বাচন করে। প্রয়োজন অনুযায়ী বীজগুলো কৃষকদের বিনামূল্যে দেয়া হয়। যাতে তারা এটা সংরক্ষণ ও সম্প্রসারিত করতে পারে। পাশাপশি ঐ কৃষক আগামী বছর অন্য কোন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ প্রদান করেন।
এই গ্রামের কৃষক আরুনি সরকার বলেন, আমাদের বাবা ও দাদার আমলের যে বীজগুলো ছিল তা একবার মাঠে রোপন করে রেখে আসতো, আর সারা বছর বাড়িতে বসে থাকত। শুধু ধান কাটার সময় যেত। তখন পরিচর্যা কম ছিল এবং সার কীটনাশকের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন বাজার থেকে যে বীজগুলো কিনতে হয়, সেগুলোকে অত্যন্ত পরিচর্যা করতে হয়। তাতে সার দিতে হয়, কীটনাশক দিতে হয়। তা না হলে ভালো ফলন হয় না। সার কীটনাশকের খরচ বাদ দিলে বাজারের ক্রয়কৃত বীজে লাভ কম হয়।