ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বার্ষিক ক্ষতি ৩.২ বিলিয়ন ডলার, জিডিপির ২.২ ভাগ

6
Spread the love

>>আম্পানে ২ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত >> ৩৭৫৭ জনের মৃত্যু

ঢাকা অফিস

প্রাণহানির সংখ্যা কমলেও জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা মাত্রা বাড়ছে। প্রেক্ষিতে দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার দুর্বলতা, ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ এবং তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতিতে কম প্রবল দুর্যোগেও সম্পদ অবকাঠামোগত ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৯ অনুসারে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা জলোচ্ছ্বাসসহ অন্যান্য দুর্যোগের ফলে সবচেয়ে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। টিআইবি’এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ বছরে (১৯৯১-২০০৬) ৬টি ঘূর্ণিঝড় হলেও পরবর্তী ১৪ বছরে (২০০৭-২০২০) ১৫টির অধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ধরনের দুর্যোগ ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবনাক্ততা এবং নদী ভাঙনে উপকূল অঞ্চলে কোটি ৫০ লক্ষ এবং চরাঞ্চলে ৬৫ লক্ষ মানুষ মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসজনিত বার্ষিক গড় ক্ষতি ৩.বিলিয়ন ডলার যা মোট জিডিপির ২.শতাংশ। প্রেক্ষিতে দুর্যোগে সাড়া প্রদানে দুর্বলতা, ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ এবং তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতির কারণে কম প্রবল দুর্যোগেও সম্পদ অবকাঠামোগত ক্ষতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম্পানসহ সাম্প্রতিক দুর্যোগে উপকূলে বসবাসকারী প্রায় কোটি ৯৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মোট ৩৭৫৭ জনের মৃত্যুবরণ এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০ মে ২০২০ তারিখে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আমফান ছিলো একটি ‘অতিপ্রবল’ ঘুর্ণিঝড় যার বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ২৪০-২৬০ কিলোমিটার, জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ১০-১৬ ফুট, সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-হারিকেনের সমতুল্য এবং বিগত ২০ বছরের মধ্যে আঘাতহানা যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় প্রলয়ংকারী। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, গাছ সরকারি অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি উল্লেখযোগ্য টেকসইভাবে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। গবেষণার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ ‘সেনডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশান’ অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ সার্বিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি ২০৩০) বাংলাদেশে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা’র (লক্ষ্য ১১.৫) অঙ্গীকার করা হয়েছে। বিভিন্ন আইন, নীতি আদেশাবলীতে দুর্যোগে করণীয় দিক-নির্দেশনা সত্বেও আগে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্যোগসহ সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলায় সুশাসনের ঘাটতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিডর আইলার পর উপকূলীয় জেলাগুলোতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অগ্রাধিকার কার্যক্রমের অংশ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে ঘাটতি লক্ষণীয়। এছাড়াও বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মডেল আর্ন্তজাতিকভাবে নন্দিত কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুসৃত হলেও সরকার গৃহীত কার্যক্রমে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ সুশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সিডর (২০০৭) এবং আইলার (২০০৯) পর গত ১২ বছরে দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসন চর্চায় কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তার ওপর বিস্তারিত গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। ইতোপূর্বে টিআইবি পরিচালিত জলবায়ু পরিবর্তনসহ দুর্যোগ বিষয়ক বিবিধ গবেষণায় সুশাসনের ঘাটতি পরিলক্ষিত এবং খাতে সুশাসন নিশ্চিতে টিআইবি’ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।