বড়দিনের শুভেচ্ছা

185
Spread the love

শুভ বড়দিন। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিন। দুই সহস্রাধিক বছর আগে মা মেরির কোল আলো করে পৃথিবীর বুকে আবির্ভাব ঘটে পুণ্যাত্মা যিশুখ্রিস্টের। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যিশুকে নিজেদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গণ্য করে থাকেন। তারা বিশ্বাস করেন, হিংসা-দ্বেষ-পঙ্কিলতাপূর্ণ এই পৃথিবীর মানুষকে সুপথে আনার জন্য উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবিভূর্ত হন যিশু। পথভ্রষ্ট মানুষের সামনে নিয়ে আসেন মহৎ স্বর্গীয় বাণী। মানবকুলকে আহ্বান করেন সত্য সুন্দরের পথে। যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে সর্বমানবের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ।

মহাকালের এক ক্রান্তিলগ্নে যিশু আবিভর্‚হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বঞ্চিত, পীড়িত মানুষের পক্ষাবলম্বন করেন। শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে ৩৩ বছর বয়সে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় তাকে। পরবর্তী সময় তার শিক্ষা সহনশীলতার পথ অনুসরণ করে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যিশুর বাণী জীবনবোধ বিশ্বজুড়ে মানব সমাজে বড় এক প্রভাব রেখে চলেছে। মানব জাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে সত্য সুন্দরের পথে ফেরাতে জীবনপাত করেছেন যিশু। বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। যিশুর কর্মপথ কণ্টকশূন্য ছিল না। অমানুষিক নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল তাকে। তবু কোনো নির্যাতন-নিপীড়ন তাকে তার আদর্শ সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। নিজ কর্মপথে থেকেছেন অটল-অবিচল। ত্যাগ, সংযম, মমতা ক্ষমার প্রতিমূর্তি যিশু।

সংঘাত, হানাহানিপূর্ণ আজকের এই পৃথিবীতে যিশুর শিক্ষা খুবই প্রাসঙ্গিক। হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ-হানাহানিতে বিশ্বশান্তি হুমকিগ্রস্ত। ধর্মীয় অহিষ্ণুতা, উগ্রপন্থিদের আস্ফালন ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। ধর্মের নাম করে চলছে নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, হত্যাযজ্ঞ। ক্ষমতা পেশিশক্তির দাপট সর্বত্র। তৃতীয় বিশ্বে যেখানে নিয়তই চলছে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নিষ্পেষণ সেখানে উন্নত বিশ্বের মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা মহড়া বিশ্বমানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মহাঅচলায়তন থেকে বের হয়ে আসার জন্য ত্যাগ ভ্রাতৃত্বের কোনোই বিকল্প নেই। যুগে যুগে মহামানবরা তাদের জীবন দিয়ে এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। যিশুর আহ্বান আত্মত্যাগ সব অশুভ অসুন্দরের বিরুদ্ধে। যিশুর শান্তি সৌহার্দের বাণী তাই আজো সর্বজনীন। পবিত্র এই দিনে আমাদের কামনা- বিশ্ব থেকে চিরতরে যুদ্ধ, দারিদ্র্য, অশান্তি দূর হোক। কোথাও না ঘটুক মানবিকতার বিপর্যয়। সর্বত্রই বিরাজ করুক অনাবিল প্রশান্তি। বড়দিনের শুভেচ্ছা সবাইকে।