বিশেষ প্রতিনিধি
সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ মুখে মাস্ক পরা না থাকলে সরকারী-বেসরকারী কোন অফিসে গিয়ে কেউ যাতে কোন সেবা না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী জুনের মধ্যে করোনাভাইরাসের আরও ৬ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। এছাড়া কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এ জন্য ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি মন্ত্রিসভা নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চায় ‘বাংলাদেশ গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস নীতিমালা, ২০২০’ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভ্যাকসিন পেয়ে যাব। এজন্য মাঠপর্যায় পর্যন্ত সবাইকে ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে সেগুলো কীভাবে করা হবে সেই ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বেসরকারী খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা করছেন।
তিনি বলেন, ইপিআইয়ের (টিকা কার্যক্রম) যে ব্যাপক কার্যক্রম আছে, (করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে) সেটিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, প্রাইভেট সেক্টরকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। যেহেতু সময় পাচ্ছি আমরা, আপাতত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদি অন্য কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন প্রস্তাব নিয়ে আসে, সরকার কাউকেই নিষেধ করবে না। আমাদের যে কমিটি আছে তারা অনুমোদন করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, আরও ৬ কোটি ভ্যাকসিন কোভেক্সের মাধ্যমে মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে। এক মাস আগে-পরে হতে পারে। প্রথম দফায় যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা, তার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসছে। দুই ডোজ ভ্যাকসিন মিলে একটি টিকা হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কোটি মানুষের জন্য টিকা আসবে। ২০ শতাংশ মানুষকে এই টিকা দেয়া যাবে। সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। মাইনাস ১৭ ডিগ্রী তাপমাত্রায় করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তৃণমূল পর্যন্ত গিয়ে টিকা দেয়ার কাঠামোই আমাদের নেই। একমাত্র কোল্ডস্টোরেজে রাখতে পারবেন। টেকনিক্যাল কমিটি যদি মনে করে আমাদের যে কাঠামো আছে সেটাকে বড় রকমের কোন পরিবর্তন না করে টিকা দেয়া যায় এবং কোন সমস্যা হবে না এটা টেকনিক্যাল বিষয়। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, মডার্না এবং ফাইজার দুটির টিকাই মাইনাস ২৫ ডিগ্রী এবং আরেকটা মাইনাস ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে।
‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নিশ্চিতের নির্দেশ মন্ত্রিসভার:
সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ মুখে মাস্ক পরা না থাকলে সরকারী- বেসরকারী কোন অফিসে গিয়ে কেউ যাতে কোন সেবা না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সমাজের সচেতন ব্যক্তি সবাই এই কাজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- যেহেতু (করোনাভাইরাস) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা আমাদের আরও একটু শক্ত অবস্থানে যেতে হবে যাতে যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়। আর মাস্কের কথা তো বারবার আলোচনায় আসছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এটা মুখে বলছি, এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। যে মাস্ক না পরে আসবে সে সরকারী-বেসরকারী যে অফিসেই আসবে কোনভাবেই যেন সেবা না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এটার একটা বড় রোল দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। তিনি আরও বলেন, এখন একটা সুবিধা হচ্ছে, আমরা তো বুঝতে পারছি। মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে আমাদের কোন ধারণাই ছিল না। বৈঠকে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগের গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
কুড়িগ্রামে হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়:
কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এ জন্য ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম একসময় মঙ্গাপীড়িত ছিল, সেখানে যদি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হয় তবে গবেষণা হবে, ফার্মিং হবে। এর মধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থার আরও উত্তরণ হবে। ওই এলাকার লোকজনের কৃষি ও সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণ করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে মোট ১৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৪৬টি সরকারী এবং ১০৭টি বেসরকারী। আর দেশে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যে টেকনোলজি ডেভেলপ হবে তা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটে বিস্তৃত হলে ওই এলাকার লোকজন কৃষিকাজের মাধ্যমে ভুট্টা, শাক-সবজি, মিষ্টি আলু ও মিষ্টি কুমড়া, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের অবস্থার আরও উন্নতি করতে পারবে। তিনি বলেন, ১০-১২ বছর ধরে ওখানে মঙ্গা নেই। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ওই এলাকার লোকজনের কৃষি ও সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার থাকবেন। আইনে সিন্ডিকেট, এ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়ন্ত্রণ করবে।