মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ধাপে ধাপে ছুটির মেয়াদ বেড়েই চলেছে। শুক্রবার ছুটি আরও একধাপ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করেছে সরকার।
এর আগে দেশে করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা ছাড়া অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা ছিল। সেই সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে আজ আবারও আরেক দফা ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা এলো। মহামারির কারণে এবার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়নি সরকার।
করোনাকালে দেশের শিক্ষা খাত নাজুক সময় পার করছে। প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময় ধরে দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উপরে কোনোরকমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভাস টিকে থাকলেও প্রযুক্তির থাকা একটি বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী হারাতে বসেছে তাদের শিক্ষা জীবন।
করোনাকালে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত জীবন যাপনে নানা বিধি নিষেধ থাকলেও সেসব দেশে ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। নিয়মিত দেশের সব প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক এবং কোনো বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ মানছে না জনগণ, শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এ ভয়ও অবশ্য অযৌক্তিক নয়।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা খাতের নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এসব নিয়ম নানা সমস্যা তৈরি করবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা। এছাড়া এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এই করোনার মধ্যে কোনো ধরণের গবেষণা-সমীক্ষা বা উপযোগিতা পরীক্ষা হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরণের পরিবর্তনের আগে নানা ধরণের কার্যক্রম, গণশুনানি নয়তো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সংলাপ সেমিনার আয়োজন করা হয়ে থাকে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
করোনার এই সঙ্কটকালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্যাভ্যাস ফিরিয়ে আনা। শুধুমাত্র অনলাইনেই যদি তা চালিয়ে যেতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভর্তি কার্যক্রমে নিয়ম পরিবর্তনের আগে যথেষ্ট পরিমাণ গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
এতে দেশের শিক্ষাখাতের অকল্পনীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলাও সরকারের জন্য কষ্টকর হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন ব্যাহত না করে কী করে এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এই বিষয়ে সরকারকে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। অন্যথায় এই সময় বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঝরে পড়তে পারে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আশা করি এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাকে একমাত্র সমাধান মনে না করে সরকার কার্যকরি ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে।