দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ

5
Spread the love


বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ এই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। আর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার করাসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে কথা হবে।
তবে দুদেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত সংঘাতের মতো অনেক বিষয় যা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনায় জোর দেবে বাংলাদেশ আর ভারত চাইবে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়কে আরো গভীর করতে।


এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, একটা নতুন জেনারেশনের হাতে এখন দুদেশের সম্পর্ক। তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে হত্যা বন্ধসহ ভারতের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর সমাধানে আরো গতিশীল ক‚টনীতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পানি বণ্টনের প্রশ্ন থেকে সরে এসে উন্নয়নের কথা বিবেচনা করা দরকার। ওয়াটার রিসোর্স কীভাবে উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে সেটা দেখা উচিত।


এক বছরের বেশি সময় পর প্রতিবেশী দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তা হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি গত বছরের ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এর আগে গত মে মাসে মোদি-হাসিনা ফোনে কথা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আজকের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়ে ঢাকা আলোচনা করবে। এই ইস্যুটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিতর্কিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রমতে, ডিসেম্বর-মার্চ সময়কালে ঢাকা তিস্তার নদীর পানির ৫০ শতাংশ ভাগ চায়। নদীটি সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে আসামের ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশের যমুনার সঙ্গে মিশে যাওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে যায়। ২০১৫ সালে ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মোদি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তিস্তার পানির ভাগের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি চ‚ড়ান্ত করার প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে উভয়পক্ষই অন্য ৬টি যৌথ নদী মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামো শিগগিরই শেষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বিভিন্ন খাতে ৯টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কিছু চ‚ড়ান্ত হয়নি। কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে এখনো কাজ করছেন। এর আগে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই বৈঠকে ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ঢাকা পানি বণ্টন, কোভিড সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও রোহিঙ্গা সংকটসহ প্রধান সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরবে।


হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেলপথের ঘোষণা : বৈঠকে ভারতের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগের আরো একটি রুট খুলতে যাচ্ছে। হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেল লিংক পরবর্তীতে যুক্ত হবে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে। বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশের সীমানা অনেকটা মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে। সুসজ্জিত এই কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে রেল চলবে দুদেশের মধ্যে, সেই অপেক্ষা এখন ফুরোবার পথে। অবিভক্ত ভারতের অন্যতম হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেলপথটি ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্বে। ৫৫ বছর পর এই পথটি সম্ভাবনার নতুন মাত্রা নিয়ে হাজির দুদেশের কাছে। এই বৈঠক থেকেই নীলফামারীর চিলাহাটি ও পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারের অন্তর্গত হলদিবাড়ী স্টেশনে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেবেন দুই শীর্ষ নেতা। প্রাথমিকভাবে একটি মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে এই পথে। উদ্বোধনী দিনে নতুন রেলপথে ট্রেন যাবে নীলফামারী থেকে কোচবিহারে। এজন্য ভারতের দিকে সাড়ে ৪ এবং বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার নতুন রেললাইন। নতুন রেল লিংক চালুর বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। রেলমন্ত্রীর দাবি, ২৬ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে এই পথে। পরবর্তীতে যা যুক্ত হবে ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও।


চিলাহাটিতে সাজ সাজ রব : আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী রেল রুটের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধনের পরেই রচিত হবে ইতিহাস। সুদীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারো এই রুট দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে এই অঞ্চলের মানুষ। মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন নীলফামারীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষও। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের যাবতীয় প্রস্ততি শেষ করা হয়েছে। উদ্বোধনের শুরুতেই বাংলাদেশে ট্রেন প্রবেশ করবে ভারতে। আর সেটাই দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন সবাই।


চিলাহাটি স্টেশনে সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততা বেড়ে গেছে বহুগুণ। চিলাহাটি রেলস্টেশনে ওয়াগানের একটি মালগাড়িকে সাজানো হয়েছে। ইঞ্জিনের সামনে লাগানো হয়েছে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি। ফুল ও রঙিন কাপড়ে সাজানো হয়েছে ইঞ্জিন ও গার্ডের কামরা। এর পাশাপাশি চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরকে অপরূপ রূপে সাজানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে দুদেশের প্রধানমস্ত্রীর উদ্বোধনের নামফলক। উদ্বোধনের প্রস্তুতি দেখার জন্য ও প্রস্তুতিমূলক কাজ দেখার জন্য একাধিকবার গিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। পরিদর্শন করেছেন ভারতের নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারসহ একাধিক কর্তাব্যক্তি।


রেলরুট চালু হলে বদলে যাবে এই এলাকার চিত্র। মানুষজন ব্যবসার মাধ্যমে লাভবানের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুদীর্ঘ ৫৫ বছর পর আবারো চিলাহাটি দিয়ে ভারতে ট্রেন রুট চালু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার আবেদন করেন, শুধু পণ্যবাহী নয়, এই রুট দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক।

চিলাহাটির আরেক বাসিন্দা লিজন বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। আর একটা স্বপ্ন হলো স্থলবন্দর চালু হওয়া। চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে দুদেশের মানুষ। আগে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতো। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো ব্যবসায়ীরা। এখন চিলাহাটি দিয়ে পণ্য গেলে অর্থ সাশ্রয় ঘটবে ব্যবসায়ীদের।