ক্ষত বিক্ষত বঙ্গবন্ধু, বিদীর্ণ বাংলাদেশ

3
Spread the love

যিনি না থাকলে আজকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হত না। যিনি এই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্য জীবনের সিংহভাগ সময় পাকিস্তানি জেলে কাটিয়েছেন। যার ব্যক্তিগত ত্যাগ তিতীক্ষা ও রাজনৈতিক সংগ্রামের কারণে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় তিরিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে। অজস্র মানুষের রক্ত ও মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে স্বাধীন রাষ্ট্রটি জন্ম নিয়েছিল তার রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল না কোনো ধর্মীয় পরিচয়। একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ আজ হায়েনা কবলিত।

একাত্তরের মহান স্বাধীনতা বিরোধিরা গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মৌলিক বিধিবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে এখনও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্ঘবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। ধর্মীয় মৌলবাদ গেড়ে বসে সমাজ ও রাষ্ট্রের স্তরে স্তরে। ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশকে বানানো হয় ইসলামিক রাষ্ট্র। তারপর বহু পথ পাড়ি দিয়ে আজ জাতির পিতার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি শাসন করছে। দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিককাল ক্ষমতায় থেকে নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতার ভিতর দিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ এর পর দীর্ঘদিন চর্চিত বিকৃত ইতিহাস থেকে নতুন প্রজন্ম এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও তার প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই আঘাত আসতে শুরু করেছে স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর। দেশের এক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠি ইসলাম ধর্মের মূল বার্তাকে পাশ কাটিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। ধর্মীয় সমাবেশে ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। আমরা বহুদিন আগে থেকেই এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিকৃত ব্যাখ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছি। কিন্তু আজ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় শাসক শ্রেণী কোনো এক রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এই গোষ্ঠীর প্রতি কোনো ধরণের পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে আজ তারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মত দুঃসাহস এই স্বাধীন বাংলাদেশে দেখাতে পেরেছে। তা-ও জাতির পিতার প্রতিষ্ঠিত দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়।

সংবাদে আমরা জানতে পারি: গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরে অংশ নেয় দুই ব্যক্তি। শনিবার সকালে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়: একই বেদিতে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরণের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই বেদিতে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। ওই ঘটনা সিসিটিভির ফুটেজে পুরোটাই দেখা গেছে। সেখানে দেখা যায়, রাত ২টার পরপর দুইজন পিঠে ব্যাগ বেঁধে নিয়ে এসে মই দিয়ে উঠে ভাঙচুর চালায়। তাদের গায়ে জোব্বা ও মাথায় পাগড়ি ছিল। ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে তারা ভাঙচুর চালিয়ে নিরাপদে চলে যায়। পুলিশ শহরের বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে। কারা এ ঘটনায় অংশ নিয়েছিল তা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বেশ কয়েকজনকে। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত ও মুখের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামির রিমান্ড শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

আমরা এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ধৃষ্টতাপূর্ণ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশপাশি জড়িতদের এবং উস্কানিদাতাদের কঠোর শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন চাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের দুঃসাহস বাংলাদেশের বুকে দেখাতে না পারে। বেশ কিছুদিন ধরেই এক শ্রেণীর ‘মোল্লা’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসলেও সরকারে পক্ষ থেকে বিস্ময়কর নীরবতা দেখে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। সরকার এই বিষয়টি নিয়ে নীরব ছিলেন। তারপর কুষ্টিয়ার এই জঘন্য ঘটনা আমাদের হতবাক করে দেয়। আমরা চাই এই বিকৃত ধর্ম চর্চাকারির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। আর কালক্ষেপন মানে দেশের মৌলিক রাষ্ট্রনীতি হুমকির মুখে পড়বে। দেশ তলিয়ে যাবে মধ্যযুগের অন্ধকারে। তখন এদের হাত থেকে দেশ জাতি কেউই রেহাই পাবে না।