ভাসানচরে রোহিঙ্গা বসতি

4
Spread the love

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অবশেষে ভাসানচরে যাচ্ছে এটি একটি ইতিবাচক সংবাদ নিঃসন্দেহে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও নীতি, অত্যাচার-নিপীড়ন, গণহত্যা ও ধর্ষণে অতিষ্ঠ হয়ে সে দেশত্যাগী ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিতান্ত মানবিক কারণে এবং আন্তর্জাতিক চাপে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয় তাদের। বর্তমানে কক্সবাজার-টেকনাফ সংলগ্ন রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একেবারে ঠাসাঠাসি গাদাগাদি অবস্থা। অস্বাস্থ্যকর, অমানবিকও। তদুপরি নিরাপত্তার অভাব। যদিও সরকার, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলো যথাসাধ্য করছে যার যার অবস্থান থেকে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তিসহ প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারিত হলেও সেদেশের সরকারের অসহযোগিতার কারণে তা ভেস্তে যায়। বর্তমানে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারীর চাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে ভাসানচরে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করেছিলেন। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নোয়াখালীর প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তন বিশিষ্ট ভাসানচরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২,৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাসের উপযোগী আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সকল সুযোগ-সুবিধাসহ। এক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী। কিন্তু কিছু এনজিও ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা এতদিন সেখানে যেতে গড়িমসি করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে বিদেশগামী কিছু রোহিঙ্গাকে সাগর থেকে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে সেখানে। উখিয়া-টেকনাফের প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে প্রস্তুত। ১০ ডিসেম্বরের আগেই তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে, যা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। ফলে স্বভাবতই উৎসাহিত হবে অন্যরাও। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি হয়েছে। ব্যবস্থা হয়েছে আয়-রোজগারেরও। যেমন- গবাদিপশুপালন, চাষাবাদ, হাঁসমুরগি পালন ইত্যাদি। মাসওয়ারি রেশন দেয়া হবে এক বছর। ভাসানচরের পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিদর্শনে খুব শীঘ্রই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

প্রতিবেশী মিয়ানমারে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দেশটির বহুল পরিচিত ও আলোচিত নেত্রী আউং সান সুচির দল এনএলডি পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে সুচি সেনাবাহিনীর সর্বময় ক্ষমতা ও আধিপত্য কতটা খর্ব করতে পারেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কতটুকু অবদান রাখতে সমর্থ ও সফল হন মূলত তার ওপরই নির্ভর করছে বহির্বিশ্বে আউং সান সুচির ভাবমূর্তি উদ্ধারের সম্ভাবনা। তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ৩৯ মাস পার হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কোনভাবেই আত্তীকরণ করা হবে না। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই তাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলবে ইউরোপ-আমেরিকাসহ তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসনের। এটি সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শুনানির বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতি। নবনির্বাচিত সুচি সরকার কিভাবে তা মোকাবেলা করে সেটিই দেখার বিষয়। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।