বাগেরহাটে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় চিন্তিত কৃষক

3
Spread the love

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় বোরো মৌসুমে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম হয়নি। অধিক ফলনের আশায় চঙ্গা দামে বীজ কিনে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পঙ্গেছেন চাষিরা। ধানের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরি করে বীজ বুনতে না পেরে হতাশা বিরাজ করছে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সরকারি বীজ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় এবছর প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। এর মধ্যে ৪২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও অবশিষ্ট জমিতে চাষ হবে উচ্চ ফলনশীল উফষী ধান। এর জন্য প্রায় ৬‘শ টন হাইব্রিড ও ২৫০ টন উফষী ধান বীজের চাহিদা রয়েছে। এই মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজস্ব খাত থেকে ৩০ টন হাইব্রিড ধানের বীজ ও ১০ টন উফষী ধানের বীজ বিতরণ করবে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে।বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট জাত বীজ দিয়ে অবশিষ্ট চাহিদা মেটাবেন চাষিরা। বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানির নামে ১০টির উপরে কোম্পানি হাইব্রিড ধান বীজ বিক্রয় করেন। এসব বীজ কোম্পানি ভেদে ২৫০ থেকে ৪‘শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বাজারের বিভিন্ন হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় ফলন ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের। এদিকে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপননকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি-বীজ)এর বীজের দাম অপেক্ষাকৃত কম ও মান ভাল হওয়া স্বত্বতেও শুধু প্রচারণার অভাবে চাষিরা বেসরকারি বাণিজ্যিক কোম্পানির বীজের উপর নির্ভর করছেন চাষিরা। ৫‘শ টনের উপরে হাইব্রিড বীজের চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি-বীজ, বাগেরহাট কার্যালয় মাত্র ১‘শ কেজি হাইব্রিড ও ১ হাজার ৫‘শ কেজি উফষী ধানের বীজ বিক্রয় করতে পেরেছেন। সরকারি বীজের মান ও দাম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালালে প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হত বলে দাবি সচেতন মহলের।

 হাইব্রিড ধানের বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়া কুচয়া উপজেলার চাষি শেখ রুস্তম আলী বলেন, জমির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ১৫ কেজি ধান ক্রয় করেছিলাম। এর মধ্যে ১২ কেজি ধানে অঙ্কুরোদগম হলেও ২৯০ টাকা করে কেনা নামী কোম্পানির ৩ কেজি ধান একদম নষ্ট হয়ে গেছে। কোন অঙ্কুরোদগম হয়নি। রুস্তমের প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান, রাজলক্ষী ব্রান্ডের ধান কিনেছিলাম, অঙ্কুরোদগম হয়নি। আবার নতুন করে ধান কিনেছি। আসলে কি করব, এত দামের ধান যখন নষ্ট হয়, তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। একই উপজেলার জামাল শেখ বলেন, হাইব্রিড-৪৪৪ ধান কিনেছিলাম বীজ হয়নি। এত টাকা দিয়ে ধান কিনতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বীজ না হলেও আরও বিপদে পঙ্গতে হয় আমাদের।

এসিআই-১ ধান কিনেছিলেন মোজাফফর মোল্লা নামের এক চাষি। তার ধানেও অঙ্কুরোদগম হয়নি। এখন নতুন করে কি ধান কিনবেন এই নিয়ে আছেন শঙ্কায়। শুধু এরা নয় বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিদের কাছ থেকে হাইব্রিড বীজ ধানে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, সরকারি ভাবে বিতরণকৃত বীজের প্রাপ্যতা নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে চাষিদের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পছন্দের মানুষ না হলে সরকারি সার-বীজ পাওয়া যায়না এমন অভিযোগ করেছেন চাষিরা।

বিএডিসি-বীজ, বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিসেস আকলিমা খাতুন বলেন, আমরা দুই ধরণের হাইব্রিড বীজ বিক্রি করি। সরকার নির্ধারিত ২২৫ টাকা দরে আমরা ধান বীজ বিক্রি করছি। কিন্তু অনেক কৃষকরা না জানার কারণের আমাদের এখান থেকে ক্রয় করে না। তবে সরকারি বীজ ব্যবহারের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। চাষিদের সরকারি বীজ ক্রয়ের জন্য পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। সার-বীজ কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এই বোরো মৌসুমে আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত বীজ রয়েছে। চষিরা চাইলে আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বীজ সরবরাহ করতে পারব।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, কিছু কোম্পানির বীজে অঙ্কুরোদগম না হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানকে জানালে তারা ওই ব্রান্ডের বীজ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনরায় বীজ দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। এছাঙ্গা কোন কোম্পানির বীজে যদি অঙ্কুরোদগম না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলো যাতে বাজারজাত না হতে পারে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি‘র বীজের দাম অপেক্ষাকৃত কম এবং ফলনও ভাল। চাষিরা বিএডিসির বীজ ব্যবহার করলে উপকৃত হবে।