১৩ বছর পূর্তি আজ : সিডরের ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী

3
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ নভেম্বর। সিডর তা-বের ১৩ বছর। প্রকৃতির বুলডোজারখ্যাত সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল তা-বের কথা সাগরপারের কলাপাড়ার মানুষ আজও ভোলেনি। এখনও কলাপাড়ায় সাত হাজার পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়ি ঘরে ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া যাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছিল তারও ৯৫ ভাগ ঘরের খবর নেই। বাড়ছে গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা। তবে নতুন করে ১২টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পরিবারকে দুই বছরে গৃহপুনর্বাসন সহায়তা দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে সিডরের ভয়াল তা-বে কলাপাড়ায় সরকারী হিসাবে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। বেসরকারী হিসাবে এ সংখ্যা ১০৪ জন। আজও খোঁজ মেলেনি সাত জেলে ও এক শিশুর। আহত হয়েছিল ১৬৭৮ জন। এর মধ্যে ৯৬ জন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিধবা হয়েছে ১২ গৃহবধূ। এতিম হয়েছে ২০ শিশু। সম্পূর্ণভাবে ঘর বিধ্বস্ত হয় ১২ হাজার নয় শ’ পরিবারের। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার নয় শ’ ২৫ পরিবারের ঘর। তিন হাজার দুই শ’ ২৫ জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের কালো থাবায় শতকরা ৯০ পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। এর মধ্যে ৫৪৭৩টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। ৫৪০ পরিবারের জন্য ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে সাত বছর আগে। কিন্তু এসব ব্যারাকের অন্তত ৪০০ কক্ষে লোকজন থাকছে না। ব্যারাক হাউসের চাল বেড়া খুঁটি চুরি হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আরও চার সহস্রাধিক পরিবারের প্রয়োজন গৃহপুনর্বাসন। বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়া ১২ হাজার পাঁচ শ’ ১৬ পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এছাড়া তিন হাজার, আড়াই হাজার, দুই হাজার এবং ১ হাজার টাকা করে আরও ছয় হাজার সাত শ’ পরিবারকে গৃহ নির্মাণে সহায়তা দেয়া হয়েছে। গৃহনির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা দেয়া হয় অন্তত সাত হাজার পরিবারকে। এ খবর সরকারের বিভিন্ন সূত্রের। তারপরও সম্পূর্ণ এবং আংশিক বিধ্বস্ত পাঁচ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে। লালুয়ার চারিপাড়ার ভাঙ্গা বাঁধের স্লোপে থাকা অন্তত ৫৩ পরিবারের লোকজন জানান, এখনও এক চিলতে জমির সন্ধান তাঁদের মেলেনি। রাবনাবাদ পাড়ের এসব জেলে পরিবারের জোয়ার নিত্যদিনের জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন। এরা বেড়িবাঁধের বাইরে ঝুপড়ি তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, এখনও বেড়িবাঁধের বাইরে কমপক্ষে সাত হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, গৃহহীন, হতদরিদ্র মানুষকে গৃহপুনর্বাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

আমতলী

নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী থেকে জানান, সিডরে জয়ালভাঙ্গা গ্রামের মেয়ে ও দুই নাতিকে হারানো জয়নব বিবি। ১৩ বছর পরও এখনও তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপরে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বৃদ্ধা জয়নবের অভিযোগ স্থানীয় চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী ও ইউপি সদস্য মোঃ সিদ্দিকুর রহমান গাজী তাকে সহযোগিতা করছে না। তিনি শেষ বয়সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি ঘরের দাবি জানিয়েছেন। এভাবে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ক্ষত ১৩ বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী। উপকূলের অর্ধশতাধিক পরিবার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। এখনও সিডরের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর রাতে ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার গতির প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে ল-ভ- করে দিয়েছিল দক্ষিণের জনপদ। উপকূলীয় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৯৭ জনের প্রাণহানী এবং ৪৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। অগণিত গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুন্দরবনের গাছপালা ব্যাপক ক্ষতি হয়। সিডরের আজ ১৩ বছর। কিন্তু আজও উপকূলবাসীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখনও উপকূলের নদী ও সাগরপাড়ের অর্ধশতাধিক জেলে পরিবার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল ফরাজী ও ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান অসহযোগিতার কারণে স্বজনহারা এ পরিবারগুলো আজও ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। শনিবার ঘুরে দেখা গেছে, জয়ালভাঙ্গা, তেতুঁলবাড়িয়া, নিদ্রাসকিনা, ফকিরহাটসহ উপকূলের অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছে। তার এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই নির্মাণ করতে পারেনি। মাছ শিকার করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতন দিনাতিপাত করছেন তারা। ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী হোসনেয়ারা ও ফুলবরু বিবি বলেন, ১৩ বছরেও একটি ঘর পেলাম না। চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী ও ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান গাজী আমাদের কিছুই দিচ্ছে না। যাদের ঘর জমি জমা আছে, তাদের ঘর দিচ্ছেন তারা। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি বলেন, ঝুপড়ি ঘরে বসবসরত পরিবারের তালিকা উপজেলা পরিষদে জমা দেয়া হয়েছে। ১৫টি ঘর পাস হয়েছে।