খুলনাঞ্চল ডেস্ক
এশিয়া অঞ্চলের নিপাহ ভাইরাস ‘আরেকটি মহামারীর কারণ হতে পারে’ বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ বা পিএএনএস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আগে যতোটা ধারণা করা হয়েছিল এই ভাইরাস তার থেকে বেশি সংক্রামক। যেকোনো সময়, যেকোনো অঞ্চলের জনবসতির ভেতর ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭০০ বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসটির এমন স্ট্রেইন পেয়েছেন যা এই বিপদের কারণ হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেক্সশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক এবং বিখ্যাত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি। গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অনুমোদন দেয়া হয়। জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে ২ নভেম্বর। গবেষকেরা বলেছেন, ভাইরাসটি দিনে দিনে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সংক্রমণের ‘সহজ স্ট্রেইন’ তৈরি করে ফেলতে পারে! প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিপাহ ভাইরাস বাংলাদেশ-ভারতের ঘনবসতি অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছর দেখা দেয়। প্রাণঘাতী এই রোগটির এখনো কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। কেরালায় ২০১৮ সালে যে ১৮ জন আক্রান্ত হন, তার ১৭ জনেরই প্রাণ গেছে!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিকভাবে যেসব প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধিকে অগ্রাধিকার দেয়, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ সেসব রোগের একটি। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই মারা যায়।
২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রায় প্রতিবছরই এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরে দেশে ৩০৩ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মারা গেছে। এ রোগে আক্রান্ত বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের স্নায়ুগত জটিলতায় ভুগে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাথন এপস্টেইন গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ভাইরাসটি বারবার দরজায় কড়া নাড়ছে।
‘এটি বারবার বাদুড় থেকে মানুষে চলে যাচ্ছে। করোনার মতো মানুষ থেকে মানুষ সহজে হয়তো ছড়াচ্ছে না; কিন্তু আমরা সেই শঙ্কা করছি। এতে এমন জেনেটিক স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্ট থাকতে পারে যা খুব সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বড় ধরনের মহামারি সৃষ্টি হতে পারে।’