-সেলিনা আক্তার
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের একের পর এক ঘটনায় জাতি আজ উদ্বিগ্ন। চলমান নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানা”েছ যেন আর কোনো নারী ও শিশুকে নির্যাতনের শিকার হতে না হয়।
শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, সমতলে, ঘরে বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হচ্ছে নারী। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টা বা যৌন হয়রানি, উত্যক্তকরণ, এসিড আক্রমণসহ নানাবিধ সহিংসতার শিকার হচেছ নারী ও শিশু। দেশের প্রতিটি নারী ও শিশু সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মূল কারণ নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করার দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ। শিক্ষিত, কর্মজীবী, গৃহবধূ, শ্রমিক যে পরিচয়েরই হোক না কেন ধর্ষকের নোংরা হাত থেকে রেহাই পাচ্চে না কেউ। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত শ্রেণির কোনো ভেদাভেদ এক্ষেত্রে অন্তত দেখা যাচ্ছে না। একজন ধর্ষণকারী সে সমাজের সর্বস্তরে ঘৃণিত। এরপরও মানুষরূপে কিছু হিং¯্র প্রাণী যারা এ ধরণের কর্মকা- ঘটিয়ে থাকে। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচেছ না শিশু ও বৃদ্ধরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। এই করোনা মহামারির মধ্যেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ‘ধর্ষণ’ এক ধরণের যৌন আক্রমণ। সাধারণত একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম বা অন্য কোনো ধরণের অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কতৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এ রকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া ও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। গা শিউরে ওঠার মতো এমন ধর্ষনের খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পত্রিকার খবরের বাইরেও প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। অপত্তিকর ছবি তুলে ও গোপন ভিডিও ধারণ করে ছাত্রীকে ব্লাকল্যাক মেইল করে শিক্ষার্থীকে ফাঁদে ফেলে, পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে। কাউকে বেশি নম্বর দেওয়ায় প্রলোভন দেখিয়ে, আবার ফেল করা শিক্ষার্থীকে বাসায় ডেকে এনে অন্যের খাতা দেখে লেখার সুযোগ দিয়ে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ শেষে নির্মম নির্যাতন, এমনকি চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। আদিকাল থেকে সমাজের চিন্তা-চেতনা নারীকে অধস্তন অব¯’ানে রাখে। নারী বিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি এক দিকে নারীর উপর সহিংসতা করার প্রবণতা তৈরি ও লালন করে এবং প্রয়োগ করে, অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার নারীকেই দোষারোপ করে। সহিংসতাকারী বিনা বিচারে পার পেয়ে যায় বা বিচারের আওতায়ই আসে না। একটি শিশুর মনস্তত্ব গড়ে ওঠে পারিবারিক পরিবেশ থেকেই। যে পরিবারের শিশু নারীর প্রতি অবমানামূলক আচরণ আর বৈষম্য দেখে বড়ো হয়, সে নারীকে কখনোই সম্মান করতে শেখে না, যার প্রমাণ ঘরে-বাইরে সর্বক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। পারিবারিকভাবে নারীর প্রতি নিপীড়ণ ও অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে বড়ো হওয়া শিশুদের মাঝে নারীর প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ও বিভ্রান্তমূলক আচরণ তৈরি হয়। কেবল পুরুষ শিশুটির বেলায় নয়, কন্যা শিশুর ক্ষেত্রে একই প্রমাণ মেলে। যখন পরিবারের কোনো শিশু বাবাকে দেখে মায়ের প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে। তখন কন্যা শিশুটি ধরেই নেয় তার জীবনেও এমটিই ঘটবে। এই অসুস্থ মানসিকতাকেই সে জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা মনে করে বড়ো হতে থাকে। আর পুরুষ শিশুটি শেখে স্ত্রীর প্রতি এ ধরণের নিপীড়নমূলক ব্যবহারই নিয়ম। বাড়িতে যখন মেয়ে আর ছেলের মধ্যে খাবার প্লেটে, শিক্ষায়, খেলাধূলায় এমনকি চলাফেরারও বৈষম্য করা হয়; তখন থেকেই ছেলে শিশুটি নিজেকে উন্নতর প্রজাতি ভাবতে শুরু করে। অন্যায় আর ভুল ভাবনাই তাকে নারীর প্রতি হেয় ও সহিংসতামূলক আচরণ করতে শেখায়। বাড়ির ভেতরে স্বজনদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন, এমন নারী। শৈশবের এইসব তিক্ত অভিজ্ঞতা বিশ^াসে পরিণত হলে, একদিকে পুরুষ শিশুটি যেমন নারীর সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে; তেমনি কন্যা শিশুটিও একে নিয়তি ধরে নেয়। তাই শিশুকালেই নারী-পুরুষ নয়; বরং উভয়কেই মানুষ হিসেবে সমানভাবে চিন্তা ও আচরণ করার শিক্ষাদানের দায়িত্ব পরিবারেরই। পরিবারে সঠিক শিক্ষা ও পরিবেশ পেলে নারী শিশুটি যেমন আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠবে, তেমনি পুরুষ শিশুটিও নারীকে সম্মান করতে শেখবে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন এবং পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন উঠে এসেছে নিপীড়নের এ তথ্য। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নিপীড়নের এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়কালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন। যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ২০৮ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছে ১২ নারী। গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছন। গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয় ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছে ৭৪ নারী। শিশুদের কাছ থেকে স্মার্ট ফোন দূরে রাখতে হবে। হাতের নাগালে ফোন পেলেই তাদের জন্য পর্নো সাইটগুলোতে বিচরণের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। শিশু বয়সে এ ধরনের উত্তেজক সাইট দেখলে তাদের মধ্য থেকে নারীর প্রতি মমতা, ভালোবাসা দূর হয়ে তাদেও কামের বস্তু হিসেবে মনে করতে শুরু করবে। তাই শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশ সবচেয়ে জরুরি। শিশুর চরিত্র বিকাশের মহাবিদ্যালয় পরিবার। একটি শিশু বৃদ্ধিও সঙ্গে সঙ্গে যা দেখে, তাকে যা দেখানো হয়, করানো হয়, তা-ই শিখে ও করে। শিশুরা টিভিতে নাটক-সিনেমায় অনেক অপরাধমূলক দৃশ্য দেখে। অভিভাবককে দেখতে হবে সন্তান কোথায় যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী করছে। সন্তান যাতে ভালো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশে নৈতিকতা বজায় রেখে চলতে পারে। প্রত্যেক অভিভাবককে সেদিকে যতœবান হতে হবে। শিশু-কিশোর ও তরুণদেও জন্য খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কওে তার বিপদগামী পথে পা না বাড়ায়। ধর্ষণের ঘটনা রোধে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যেমন আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তেমনি পারিবারিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক অনুশাসনের প্রতিও জোর দিতে হবে। সন্তানদের প্রতি যদি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া যায় এবং তারা কী করছে। কোথায় সময় কাটাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল রাখা হয় তাহলে হয়তো সামাজিক অপরাধের মাত্রা অনেকটা কমে যাবে।
শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। পারিবারিক ও সামাজিক বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নারীরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস যথা গার্মেন্টস, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, চা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও মোট শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী। আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোট রফতানি আয়ের ৭৫ ভাগ উপার্জনকারী তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শতকরা আশি ভাগ শ্রমিকই নারী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছে নারীরা। তাদের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিদেশে কর্মরত নারীরাও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা দুটোই বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশে^র কাছে ভালো উদাহরণের স্বাক্ষর দিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় নারীর প্রতি সহিংসতা দমনে বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার নিরলসভাবে নারীদের মূলধারায় আর্থসামাজিক কর্মকা-ে সমান এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো এবং ক্ষমতায়নে অন্তরায় সমূহ দূর করার মাধ্যমে নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। নারীর প্রতি সব রকমের বৈষম্য দূরীকরণের নিয়মপত্র (ঈঊউঅড) এবং বেইজিং প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। সরকার সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি অনুসরণ করে দলমত নির্বিশেষে সবকিছুর উর্ধ্বে। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দিবে না সরকার, হোক সে দলের কিংবা বিরোধী দলের। সমাজতান্ত্রিক বিশ^ নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্ষণ নামে ব্যাধি থেকে অনেকাংশেই মুক্ত হয়েছে। কিছু সংখ্যক বিকৃত মানসিক হতাশাগ্রস্ত ধর্ষক বর্তমানে দেশকে জিম্মি করে রাখছে এবং এ দেশের নারী নেতৃত্বেও ও নারীদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। গুটিকয়েক এসব দুষ্কৃতকারী ধর্ষকের জন্য রাষ্ট্র তথা সমাজে বিশৃঙ্খলা থাকতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উ”চারণ করে বলেছেন, ‘অপরাধ করে কেউ কোনো সময় পার পেয়ে যাবে না তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে। আদালত এর উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবে’। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদ-ের বিষয়টি জনগণের পক্ষ থেকে উঠেছে। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। ধর্ষণের মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। ১৩/১০/২০২০ সংসদ বিষয়ক গেজেট থেকে প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালের আইনের ৭ ধারা, ৯ ধারা (উপধারা ১, ৪, ৫) ১৯, ২০ ধারাসহ কয়েকটি ধারায় সংশোধন আনা হয়েছে। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী। বাংলাদেশের ধর্ষণের সর্বো”চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদ-। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদ-। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদ-ের বিধান আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় আগে বলা ছিল। যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তাহলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী আইনের ৯(১) উপধারার অধীন ধর্ষণের অপরাধের জন্য মৃত্যুদ- অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- হবে। ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। বর্তমানে ১০১ টি ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন দায়েরকৃত প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মামলার বিচারকার্য চলমান আছে। উক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে প্রত্যেকটি ট্রাইব্যুনালে গড় বিচারাধীন মামলার হার প্রায় ১৬৮৩ হয়। এছাড়া উক্ত ট্রাইব্যুনালগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব আছে। ১০১টি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এই বিপুল সংখ্যক মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তারপরও সাম্প্রতিককালে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, রুপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার দৃষ্টান্ত হিসেবে দ্রুত গতিতে নিষ্পত্তি করা হয়। এছাড়া কিছুদিন আগে খুলনায় একটি শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ৬ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পূর্ণ করে বিচারক এবং ধর্ষককে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। সাম্প্রতিককালে বরগুনায় গণধর্ষণ মামলায় সাক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- ও অনাদায়ে আরো এক বছর কারাদ-ের আদেশ দেওয়া হয়। ধর্ষণের বিষয়ে সারা দেশের প্রান্তিক স্তরের মানুষ যাতে সচেতন হতে পারে সেজন্য সারা দেশে পুলিশের উদ্যোগে একযোগে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার বাঙালি মা-বোনদের প্রতি যখন তাদের পরিবার-পরিজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এমনকি মা-বাবা তাদের নির্যাতনের শিকার মেয়ের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তখন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মা-বাবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা এসব নির্যাতিত মা-বোনকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের পিতৃ¯েœহে বেঁধে ছিলেন। আমরা যদি জাতির পিতার মহান এই আদর্শে আদর্শিত হয়ে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি, তাহলে হয়তো সমাজ থেকে নারীর প্রতি এই অত্যাচারের অবসান ঘটবে।
কন্যা, জায়া না হয় জননী, যে-কোনো নারীর পরিচয়ই এই তিনটি সূত্রে গাঁথা। নিজ গৃহে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা অন্যত্র তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। সহকর্মী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী না ভেবে সহযোগী ভাবতে হবে। যে-কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবশ্যই নারীর মতামত বিবেচনা করতে হবে। সহিংসতার আকার যেমন হোক না কেন, তা প্রকৃত অর্থে সমগ্র মানবতার জন্য কলঙ্ক। আমাদের প্রত্যাশা, যথার্থ সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হোক। কেননা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা সম্ভব বলেই আমরা বিশ^াস করি।-(পিআইডি শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম ফিচার)