খুলনাঞ্চল ডেস্ক
হোয়াইট হাউসের জন্য দীর্ঘ, তিক্ত লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রচার চালান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিন সোমবার ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও মিশিগানে প্রচার চালান। আর বাইডেন পেনসিলভানিয়া ও ওহাইওতে সমর্থকদের সামনে বক্তব্য রাখেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে একটি ও মিশিগানে দুটি জনসভা করেন ট্রাম্প। মধ্যরাতের পর মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন ভোররাতে মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে জনসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শেষ করেন ট্রাম্প। অপরদিকে বাইডেন ও তার স্ত্রী, তার রানিং মেট কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী সোমবার অধিকাংশ সময় পেনসিলভানিয়ায় কাটান। অঙ্গরাজ্যটির পিটসবার্গ এলাকায় শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে ও আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচার চালান বাইডেন। সন্ধ্যায় সেখানে সঙ্গীত শিল্পী লেডি গাগার ড্রাইভ-ইন র্যালিতেও যোগ দেন তারা। পেনসিলভানিয়ায় প্রতিবেশী ওহাইওতেও প্রচার চালান বাইডেন। রবিবার একনাগাড়ে পাঁচ অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন বলে ওইসব অঙ্গরাজ্যে চালানো প্রচারে দাবি করেন। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দ্রুত একটি টিকা বিতরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প-বাইডেনের যত প্রতিশ্রুতি: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে ইতোমধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছে। যারা ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন তারাও হয়তো মনে মনে প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছেন। নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দলে টানেন। দেশটির প্রধান দুই দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরাও এবার নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আটটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বা নির্বাচিত হলে কি কৌশল গ্রহণ করবেন তা তুলে ধরেছেন। দুই প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিতে দেখা গেছে বিস্তর ফারাক। কোন কোন ইস্যুতে দুই প্রার্থী রয়েছেন একেবারে বিপরীত অবস্থানে।
কোভিড-১৯ মহামারী: যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে করোনা মহামারী। মহামারী নিয়ন্ত্রণে গত জানুয়ারির শেষ দিকে টাস্কফোর্স গঠন করেন ট্রাম্প। কিন্তু ওই টাস্কফোর্স যে কাজের কাজ কিছুই করেনি তার প্রমাণ দেশটিতে মোট সংক্রমণ এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা। উভয় তালিকাতেই এক নম্বরে যুক্তরাষ্ট্র। নিজ দেশে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। নির্বাচনের সময়ে এ ইস্যুতে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। এবার নির্বাচনী ইশতেহারে এ ইস্যুতে তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি দেশের নিরাপত্তা এবং পুনরায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দিকে মনোযোগ দেবেন। কোভিড-১৯ টিকা আবিষ্কার এবং রোগের চিকিৎসার উপায় খুঁজে বের করতে গবেষণা কাজের গতি আরও বাড়ানোর কথাও বলেছেন। অন্যদিকে, বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে ‘কন্টাক্ট-ট্রেসিং প্রোগ্রাম’ চালু করবেন। এছাড়ও প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে অন্তত ১০টি নমুনা পরীক্ষা সেন্টার স্থাপন করা এবং সবাইকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার সুযোগ করে দেবেন। তিনি দেশজুড়ে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করবেন বলেও জানিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টির বাস্তবতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি তিনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করে পৃথিবীকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করা ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির’ মতো আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অ-নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে চান। এজন্য তিনি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে জোর দিয়েছেন। জলবায়ু ইস্যুতে ট্রাম্পের একেবারে বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, ভোটে জয়ী হলে তিনি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশ করবেন। তিনি চান ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনুক। তিনি সরকারী জমিতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন করে ইজারা দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে চান। একই সঙ্গে পরিবেশের জন্য ভাল ‘গ্রীন এনার্জি’ প্রকল্পে দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথাও বলেছেন।
অর্থনীতি: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী ১০ মাসের মধ্যে এক কোটি মানুষের জন্য নতুন কার্মসংস্থান এবং ১০ লাখ নতুন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আয়কর হ্রাসের কথা বলেছেন এবং নানা কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় উৎসাহ দিতে ‘ট্যাক্স ক্রেডিট’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাইডেন বলেছেন, তিনি উচ্চবিত্তদের ওপর কর আরও বাড়াতে চান। যাতে বড়তি অর্থ সরকারী নানা সেবা খাতে বিনিয়োগ করা যায়। তবে তিনি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যাদের আয় বছরে চার লাখ মার্কিন ডলারের বেশি কেবল তারাই ওই করের আওতায় পড়বেন। তিনি প্রতি কর্মঘণ্টায় সর্বনিম্ন মজুরি বাড়ানোর (প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মার্কিন ডলার) পক্ষেও মত দিয়েছেন। বর্তমানে সর্বনিম্ন মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ৭ দশমিক ২৫ ডলার।
স্বাস্থ্যসেবা: সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হওয়া এ্যাফোরডেবল কেয়ার এ্যাক্ট (এসিএ) বাতিল করতে চান ট্রাম্প। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারী স্বাস্থ্যবীমা খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এ আইন করা হয়। এ আইনে যেসব মানুষ দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিল রোগে ভুগছেন, বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলো যেন তাদের সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ আইনের আরও উন্নয়ন এবং বিকল্প ব্যবস্থা চান। তবে কি ধরনের উন্নয়ন বা কি বিকল্প চান সে বিষয়ে কখনওই বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি বিদেশ থেকে কমদামী ওষুধ আমদানি করে দেশে ওষুধের দাম কমানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, বাইডেন এসিএর সুরক্ষা এবং এ আইনের আরও বিস্তার চান। তিনি বয়স্ক নাগরিকদের জন্য দেশে যে ‘চিকিৎসা সেবার’ (মেডিকেয়ার) ব্যবস্থা আছে সেটার আওতা আরও বাড়াতে চান। এজন্য তিনি বর্তমান বয়স ৬৫ থেকে কমিয়ে ৬০ বছর করতে চান। যাতে আরও বেশি মানুষ এই সেবা পায়।
বৈদেশিক নীতি: ট্রাম্প আবারও বিদেশে দায়িত্বরত মার্কিন সেনার সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা বলেছেন। যদিও তিনি সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছেন এবং তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন। শুল্কারোপ অব্যাহত রেখে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক জোটগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানানো থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিরত হবে না বলে ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবেন। চীনের বিষয়ে তিনি বলেছেন, তিনি চীনের ওপর একতরফা শুল্কারোপ করবেন না। আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে তিনি চীনকে এমনভাবে ‘জবাবদিহিতায়’ বাধ্য করবেন যেন চীন তা ‘এড়িয়ে যেতে না পারে’।
বর্ণবাদ: যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীতে বর্ণবিদ্বেষ একটি ‘পদ্ধতিগত’ সমস্যা বলে মনে করেন না ট্রাম্প। অন্যদিকে, বাইডেন পুলিশ বাহিনীর ভেতর বর্ণবিদ্বেষকে একটি ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’ মনে করেন। বাইডেন বলেছেন, তিনি এমন একটি নীতি গ্রহণ করবেন যাতে বর্ণবিদ্বেষের ঘটনাগুলোকে আইনের আওতায় আনা যায়। বর্ণবাদী বিভাজন কমিয়ে আনতেই এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ৭৭ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান বাইডেন অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান আইনপ্রণেতা এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থনের ভিত্তিতে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রানিংমেট থাকাসহ এবারের নির্বাচনে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসাবে কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট হিসাবে নিয়ে বাইডেন এরই মধ্যে আমেরিকার রাজনীতিতে একটি ভিন্ন অবস্থান তৈরি করেছেন। পুলিশে তহবিল না দেয়ার আহ্বান বাইডেন প্রত্যাখ্যান করেছেন বরং সঠিক মান রক্ষার জন্য তিনি পুলিশের বাড়তি তহবিল দেয়ার পক্ষে।
আগ্নেয়াস্ত্র: বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ব্যবহার করা যায় এমন আগ্নেয়াস্ত্র (এ্যাসল্ট উইপন) বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বন্দুক বিক্রির আগে ক্রেতার অতীত খুব ভালভাবে পরীক্ষা এবং একজন কয়টি বন্দুক কিনতে এবং এক সময়ে বহন করতে পারবেন সেটার সীমা বেঁধে দিতে চান। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার কাজও সহজ করতে চান। কিভাবে বন্দুক হামলা কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে গবেষণা কাজেও তহবিল বাড়াতে চান বাইডেন। ওদিকে, আমেরিকানদের নিজেদের সুরক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখার সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে ট্রাম্প বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে ২০১৯ সালে নির্বিচারে গুলির ঘটনা বন্দুক হামলার কয়েকটি ঘটনার পর বাইডেনের মতো ট্রাম্পও বন্দুক ক্রেতাদের অতীত পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি এবং এ সংক্রান্ত কোন আইনও সামনে আসেনি।
সুপ্রীমকোর্ট: ট্রাম্প সুপ্রীমকোর্টে বিচারপতির শূন্যস্থান পূরণ করাকে নিজের সাংবিধানিক অধিকার বলে বর্ণনা করেছেন এবং এরই মধ্যে শূন্য আসনে রক্ষণশীল নতুন বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেটকে নিয়োগ করেছেন। অন্যদিকে, বাইডেন মনে করেন, সুপ্রীমকোর্টে বিচারপতির শূন্য আসনে নিয়োগ হওয়া উচিত ছিল নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নেয়ার পর এবং তিনি এমনটাই চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে নারীর গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে শীঘ্রই আদেশ জারি করতে যাচ্ছে সুপ্রীমকোর্ট। বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে সুপ্রীমকোর্ট যদি গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে আদেশ দেয় তবে তা আটকে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার সুনিশ্চিত করতে তিনি আইন পাস করবেন।
বাইডেনের প্রচারে লেডি গাগা: বাইডেন ও তার রানিংমেট কমলা হ্যারিসের শেষ প্রচারে যোগ দেবেন মার্কিন সুপারস্টার সঙ্গীত তারকা লেডি গাগা ও জন লিজেন্ড। রবিবার বাইডেনের প্রচার শিবির এই ঘোষণা দিয়েছে। দোদুল্যমান বা ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনের সঙ্গে ভোটের আগের দিন র্যালিতে অংশ নেবেন লেডি গাগা। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডগ এমহফের সঙ্গে ফিলাডেলফিয়ায় প্রচারে অংশ নেবেন জন লিজেন্ড। লেডি গাগা রাজনীতিতে কোন আগন্তুক নন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় এই তারকা তার অনুসারীদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে ২০১৭ সালে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে জো বাইডেনের একটি প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বাইডেনের প্রচারে লেডি গাগার অংশ নেয়ার খবরে ট্রাম্প শিবিরের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর টিম মুর্তাহ ১ নবেম্বর একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে লেডি গাগাকে তিনি ‘এ্যান্টি ফ্র্যাকিং এ্যাকটিভিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর জবাবে লেডি গাগা এক টুইট বার্তায় হ্যাশট্যাগ বাইডেনহ্যারিস লিখে বলেছেন, হায় টিম, হায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বিনামূল্যে আপনাদের মাথায় আছি জেনে, আমি খুবই আনন্দিত।
বাইডেনকে কিনে নিয়েছে চীন: মার্কিন নির্বাচনে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একইসঙ্গে চীন তাকে কিনে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে সোমবার টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি এমন অভিযোগ করেন। টুইটে ট্রাম্প বলেন, জো বাইডেন একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক। চীন তাকে কিনে নিয়েছে। তারা তাকে অর্থ পরিশোধ করে। ২০১৬ সালে জর্জিয়ায় ৯ শতাংশ ব্যবধানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে এই দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক ব্যবস্থার (ডেমোক্র্যাটিক পার্টি) বিরুদ্ধে জর্জিয়ার মানুষ ভোট দিয়েছিল। বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চীন সংযোগের অভিযোগ অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত মাসেই এক সমাবেশে তিনি মন্তব্য করেন, আগামী নির্বাচনে বাইডেন জয়লাভ করলে আসলে চীনেরই বিজয় হবে। খুব সাধারণভাবে মনে রাখা দরকার, বাইডেন জিতে গেলে জিতে যাবে চীন এটা খুব সাধারণ হিসাব। আপনারা এমন এক পরিস্থিতিতে আছেন যেখানে আমরা বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে তুলছি আর হঠাৎ করে বা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম চীনের প্লেগ চলে আসার কারণে। আর এখন আবার সব খুলে দেয়া শুরু করেছি। চীন এবং দাঙ্গাবাজেরা (বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে) বাইডেনকে জয়ী দেখতে চায়। কারণ, তারা জানে তার নীতিতে আমেরিকার পতন হবে। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে এসে সভা-সমাবেশ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বাইডেন শিবিরের ওপর আক্রমণ জোরালো করেছেন ট্রাম্প। শুধু বাইডেন শিবির নয়; আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন করোনাযোদ্ধা চিকিৎসকদেরও। ফের ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. এ্যান্টনি ফাউচিকেও সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
জয়ী ঘোষণা করবেন ট্রাম্প: ৩ নবেম্বরের নির্বাচনে ‘এগিয়ে থাকার’আভাস মিললেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রার্থী ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শনিবার নিউজ পোর্টাল এ্যাক্সিওসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন; মঙ্গলবার রাতে যদি ‘এগিয়ে থাকার’ আভাস পান তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল জানানোর আগেই তিনি নিজেকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেবেন। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য শুনেছেন এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় এ্যাক্সিওস। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য আগামী ৩ নবেম্বর নির্বাচন শেষে ভোট গণনা শুরু করবে। আবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ভোট গণনা শুরু করবে ৩ নবেম্বরের পর। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল পেতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। ট্রাম্প চান নির্বাচনের রাতেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা দিতে। এ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব গণনা শেষ করানোর চেষ্টা করবেন তিনি। রবিবার নর্থ ক্যারোলিনায় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোটের পর খুব বেশি সময় ফলের অপেক্ষাটা যথাযথ নয়।
যে ইস্যুতে ঘায়েল হতে পারেন ট্রাম্প: করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা- দুদিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তালিকার এক নম্বরে। এখন পর্যন্ত সেদেশে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মারা গেছে দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। প্যানডেমিকের ভয়াবহ এই চিত্র এখনও বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি। বরঞ্চ নির্বাচনের ঠিক আগে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বাড়ছে। প্রতিদিন এখন প্রায় ৮৯ হাজার আমেরিকান নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে বড় কোন দ্বিমত নেই যে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু-করোনাভাইরাস। তাদের অনেকেই বলছেন, এবার রেকর্ড আগাম ভোটের অন্যতম কারণ কোভিড। বিধিনিষেধের কারণে মঙ্গলবার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার উদ্বেগ যেমন এই আগাম ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছে তেমনি- অনেক পর্যবেক্ষকের মতে- কোভিড মোকাবেলায় সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে তাদের মনোভাব ব্যালটের মাধ্যমে দেখাতে অনেকেই উন্মুখ। ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জো গার্সটেনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা মোকাবেলা যা করছেন অধিকাংশ আমেরিকান তাতে খুশি নন। প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা হলো প্রতিদিনের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে সেই মতো তিনি সাড়া দিচ্ছেন।