ভিক্ষুক : তবুও ভাতা জোটেনি রাবেয়া-সুফিয়ার

8
Spread the love

আনোয়ার হোসেন,মণিরামপুর (যশোর):

অন্যের দুয়ারে ঘুরে পেট চলে বৃদ্ধা রাবেয়া বেগমের। স্বামী  মারা গেছেন দশ বছর আগে। তিনিও বেঁচে থাকতে ভিক্ষা করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর বাঁচার তাগিদ নিজেই নেমে পড়েন একই পেশায়। দশ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করলেও রাবেয়া বেগমের খবর রাখেন না জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সমাজকর্মী। দুই ছেলে হতদরিদ্র হওয়ায় তারাও মায়ের খবর রাখেন না। স্বামীর ভিটে না থাকায় এখন নাত ছেলের আশ্রয়ে থাকেন তিনি।

রাবেয়া বেগম উপজেলার খেদাপাড়া ইউপির মাহমুদকাটি গ্রামের হক আলী গাজীর স্ত্রী। মেম্বরের পিছু হেঁটেও নিজের জন্য একটি

ভাতার কার্ড যোগাড় করতে পারেননি ৬৮ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা। সরকারি কোন সহায়তা পান না তিনি।

রাবেয়া বেগম বলেন, স্বামী বেঁচে থাকতে গ্রাম ঘুরে যা আনতো তাতে কোন রকম চলতো। তিনি মরেছেন ১০ বছর আগে। এরপর থেকে সকাল বিকেল অন্যের দ্বারে ঘুরে দুমুঠো খাবার জোটে। ছেলেরা দুইজন ভ্যান চালায়। তাদেরই সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমাকে দেখবে কি করে! স্বামীর ভিটেমাটি নেই। নাতছেলে ইমরানের ঘরে কোনরকম থাকি।

বৃদ্ধা বলেন, আগে রাস্তার কাজ করতাম। বয়স হওয়ায় কয়েকবছর ধরে মেম্বর বাদ দেছে। একখান কার্ডের জন্যি মেম্বর মিলনের পিছে কত ঘুরিছি। মেম্বর কয়,আমার নাকি কার্ড হবে না। এখন বয়স হয়েছে। এরওর দুয়ারে গেলি দুটো ভাত জোটে। অসুখ হলি ওষুধ জোটে না। শুনিছি টাকা দিলি কার্ড হয়। আমি টাকা পাব কনে।

রাবেয়া বেগমের মত একই ওয়ার্ডের কদমবাড়িয়া গ্রামের  আরেক হতভাগ্য বিধবা সুফিয়া বেগম (৫৭)। দেড় বছর আগে দিনমজুর স্বামী আব্দুস সাত্তার মারা যাওয়ার পর পেটের তাগিদে তিনিও ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন। সুফিয়া বেগম আলসারের রোগী। অসুস্থতার কারণে এখন অন্যের দুয়ারে ঘোরা দায় হয়ে পড়েছে। এই বিধবাও সরকারি সব সহায়তা বঞ্চিত।

সুফিয়া বেগম বলেন,দেড় বছর আগে অসুখ হয়ে স্বামী মরেছে। কিছু রেখে যেতে পারিনি। এরওর দুয়ারে ঘুরে কোনরকম পেট চলে। আমি পেট ব্যাথার রোগী। এখন ঠিকমত বেরুতে পারিনে। ১৩ বছরের একটা ছেলে আছে। ও কাজ করে নিজে চলে। আমারে দেখে না। মেম্বর মিলনের কাছে অনেকবার গেছি। ‘পরে হবে’ এই বলে বারবার ফেরত দেছে।

খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর তায়জেল ইসলাম মিলন সাংবাদিকদের বলেন, রাবেয়া ও সুফিয়ার নাম ইউনিয়ন কাউন্সিলে জমা দেওয়া আছে। আগামীতে তাদের ভাতা হবে।

খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, আপাতত সুযোগ নেই। সমানে সুযোগ আসলে এই দুই বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা হবে।