কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম খলিসাকুন্ডি। গ্রামটির পূর্বে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা, পশ্চিমে আর উত্তরে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপারে গাংনী উপজেলা এবং দক্ষিণে দৌলতপুর উপজেলা। গ্রামটির শুরুতেই রয়েছে একটি কাঁচা সবজির হাট। প্রতিদিন ভোর থেকেই বসে এই হাট। গ্রামের ও আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজন সবজি নিয়ে হাটে আসেন প্রতিদিন। হাটটি বেশ জমজমাট।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার সবজি কেনা-বেচা হয় এই হাটে। এ ছাড়া লোকসমাগম হওয়ায় হাটকে কেন্দ্র করে অনেকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকালে খলিসাকুন্ডি কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের মাঠের ফসল সকাল সকাল তুলে এনে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। পাইকারি বিক্রেতারা বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতার কাছে। এভাবে ওই সবজি চলে যাচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামেও সবজি দাম অবাক হওয়ার মতো। মঙ্গলবার সকালে খলিসাকুন্ডি কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিলো পাইকারি ৮৪-৮৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া রসুন ৯৫-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬৫-১৭০ টাকা, আলু ৩৮ টাকা, পটল ৪৬-৪৭ টাকা, লাউ ২৮-৩০ টাকা পিস, মুলা ৩০ টাকা, বেগুন ৩৫-৩৬ টাকা, কচু ২৮-৩০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ২৬ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খলিসাকুন্ডি কাঁচা বাজারের সৈমিক বাণিজ্য ভান্ডারের ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম জানান, খুব ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ সবজি বাজার চলে। আশপাশের এলাকা ছাড়াও দূর থেকেও কৃষকরা আসেন এই হাটে। তিনি বলেন, সবজির বাজার একটু চড়া যাচ্ছে। কদিন আগে বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বাজার দর বেড়েছে। আরেক ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনের চেয়ে আলুর দাম একটু কমেছে। কিন্তু অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, এই বাজার থেকে সবজি পাইকারিতে কিনে ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। কেজি প্রতি ১ বা ২ টাকা থাকলেই হলো। লাউ চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, লাউ সকালে তুলে ভ্যানে করে এই বাজারে এনেছিলাম। প্রতিপিস লাউ পাইকারি ২৮ টাকা করে বিক্রি করেছি। মোট ৩০০ পিস লাউ বিক্রি করলাম আজকে। বসে থাকা ঝামেলা তাই পাইকারিতে দিয়ে দিলাম। খলিসাকুন্ডি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগলুর রহমান জানান, খলিসাকুন্ডি কাঁচাবাজারটি ঐতিহ্যবাহী। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা সবজি নিয়ে প্রায় হাজারো চাষি আসেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারাও আসেন। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার সবজি কেনাবেচা হয় এই সবজি হাটে। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা জেলার পাইকারি সবজি বাজারগুলোর মধ্যে খলিসাকুন্ডিতেই সবজির কেনাবেচা বেশি। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি ট্রাক এখান থেকে সবজি নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। খলিসাকুন্ডি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জগলুর রহমান জানান, বাজারটিতে কাদাপানিতে প্রায়ই একাকার হয়ে থাকে। প্রতিদিন যেখানে ভোর না হতেই হাজারো মানুষের মেলা বসে, সে স্থানটির উন্নয়নে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা দরকার। খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাঁচাবাজারটিতে আগত চাষিরা যাতে বন্যাবৃষ্টিতে নিরাপদে বেচাকেনা করতে পারেন সে ব্যাপারে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কিছু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।