করোনাভাইরাস মহামারির সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে পুরো বিশ্ব। ইউরোপে করোনাভাইরাস প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল, কিন্তু আবার অল্পসময়ের মধ্যে আবারও পুরো ইউরোপে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইংল্যান্ড-ইটালিসহ নানা দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউনসহ নানা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইটালি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। দেশটিতে ৪ লাখ ১৪ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ জনের। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধ জোরদার করতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইটালি। স্কুলগুলো শুরুর সময় পিছিয়ে দেওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। মাঝরাতে বার ও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পরে টেবিলে খাবার দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। ছয়জনের বেশি থাকলে ও কোনো উৎসব হলে বাতিল করা হবে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় এক মাস ধরে কারফিউ চলছে। কারফিউ ভাঙলে ১৫৮ ডলার জরিমানা হতে পারে। আজ সোমবার থেকে বেলজিয়ামের সব বার ও রেস্তোরাঁ চার সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। কারফিউ জারি করা হবে। সুইজারল্যান্ডে গতকাল রোববার করোনায় সংক্রমণ বেড়েছে। দেশটির সরকার আজ থেকে ঘরের মধ্যে জনসমাগমের নির্দেশনা দিয়েছে। মুখে মাস্ক পরতে বলেছে। ১৫ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জড়ো হওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চেক প্রজাতন্ত্রের সরকার লকডাউন আরোপ করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে তারা আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করবে। আয়ারল্যান্ড আজ থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। খুব প্রয়োজনীয় নয়, এমন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার কথা ভাবছে দেশটির সরকার। জার্মানিতেও গত শনিবার করোনার নতুন সংক্রমণ ঘটেছে। দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মানুষকে ঘরে থাকতে ও ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ২২৬তম দিনে নতুন করে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৩৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে মৃত্যু ও পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ কমলেও ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। ইউরোপের সংক্রমনের দিক পর্যলোচনা করে মাস্ক পরার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে মনিটরিং এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করা হবে বলে মন্ত্রিসভা সূত্রে সংবাদে প্রকাশ। মার্চ মাসে দেশে করোনার প্রকোপের সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা সঙ্কট নিয়ে নানা হাহাকার থাকলেও বর্তমান সময়ে সে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল, দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণে আছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র ও বাস্তব প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় রোগীর অভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। এই দিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে আমাদের ধারণা। ইউরোপেও করোনার প্রকোপ কমে আসার সাথে সাথে চিকিৎসা প্রস্তুতি কিছুটা শিথিল হয়েছিল। হঠাৎ করে সেখানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। যেহেতু দেশেও শীতকাল আসন্ন, সেজন্য সবধরণের পরিস্থিতি মাথায় রেখে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রস্তুতি ও মোকাবিলা কৌশল থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ মনোযোগী হবেন।