মোড়েলগঞ্জে ৪৯ মেট্রিক টন সারের হদিস মিলছে না : ১৭ ডিলার কারণ দর্শানোর নোটিশ

56
Spread the love

এম.পলাশ শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত সেপ্টেম্বর মাসের ৪৯ মেট্রিক টন (৯৮০ বস্তা) বিসিআইসি’র টিএসপি সারের হদিস মিলছে না। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিশানবাড়িয়া  ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে সার ডিলারদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তবে সার লাপাত্তার ঘনটাকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই এখন চলছে নানা গুঞ্জন। বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হলেও পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তিরা। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে উম্মোচিত হতে পারে ঘটনার প্রকৃত রহস্য এবং কেঁচো খুঁড়তে বেড়িয়ে আসতে পারে সাপের খামার।

বিভিন্ন পর্যায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় সরকারিভাবে ১৭জন বিসিআইসি সার ডিলার নিযুক্ত রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যকে ডিলার প্রতিমাসে সরকারের দেয়া ভর্তুকিকৃত সার চাহিদানুযায়ী উত্তোলন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত নিয়মে বিক্রির কথা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে চিত্র ভিন্ন। সাধারণ কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ এলাকার নিযুক্ত ডিলারের কাছ থেকে তাদের কাঙ্খিত সার না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

বরাদ্ধকৃত সারের মধ্যে ইউরিয়া, টি.এস.পি, ডি.এ.পি, এম.ও.পি ও বিসিআইসি চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সার কাগজে কলমে বরাদ্ধ থাকলেও গেল সেপ্টেম্বর মাসে পতেঙ্গার টিএসপি সার কোন ডিলারই যথা সময়ে উত্তোলন করেননি। অথচ সার সরবরাহকারী স্থান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বরাদ্ধকৃত এ সার খালাশ করা হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ে সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে নিযুক্ত অনেক ডিলারের নির্দিষ্ট কোন গুদাম নেই । কেউ কেউ তড়িঘড়ি কওে সম্প্রতি গুদাম ঘরের ব্যবস্থা করেছেন। কোন কোন ইউনিয়নে ভাড়া করা অনুপযোগী ঘর থাকলেও নিয়মিত খোলা না থাকায় কৃষকরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ইতোপূর্বে এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন তেলিগাতি ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার। সরকার নিযুক্ত ডিলাররা যথা সময়ে সার বিতরণ না করায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে সার ক্রয় করতে হচ্ছে কৃষকদের। অপর দিকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে সার কিনতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। ডিলারদের মাধ্যমে যথাযথ নিয়মে সার সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম দেখ ভালের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন করে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার। বরাদ্ধকৃত সার বিতরণকালে মেইনটেন করা হচ্ছে রেজিষ্টার খাতা, আর এসব রেজিষ্টারে স্বাক্ষর করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওইসব উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ। কিন্তু বিসিআইসি(পতেঙ্গা) টিএসপি সার বিষয়ে মেইনটেন করা হচ্ছে না রেজিষ্টার খাতা এবং লাগছেনা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারগনের কোন স্বাক্ষর।

 এ সর্ম্পকে বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক উপ-সহকারী কৃষি অফিসার জানান, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে টিএসপি সার বরাদ্ধ এবং বিতরনের বিষয়টি তারা অবগত নন।

মাঠ পর্যায় মোড়েলগঞ্জ পৌর শহরের বিসিআইসি সার ডিলার জয়গুরু ভান্ডারের মালিক বিমল রায়ের ভাই নকুল রায়, বলইবুনিয়া ইউনিয়নের মেসার্স সিকদার এন্টারপ্রাইজের ডিলার মো. নাসির শিকদার, পঞ্চকরন ইউনিয়নের ডিলার রিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক সামছুল আলম শেখ, তেলিগাতি ইউনিয়নের ডিলার আবুল বাশার, দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নের শাহাদৎ এন্টারপ্রাইজের ডিলার-মাওলানা শাহাদৎ হোসেন অসুস্থ থাকায় দায়িত্বরত তার ছোট ভাই আব্দুল গফফারসহ একাধিক ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের সরকারি বরাদ্ধকৃত বিভিন্ন প্রকারের সার উত্তোলন করে ইতোমধ্যে বিতরণ করেছেন। তবে তারা বিসিআইসি পতেঙ্গার সার উত্তোলন করেননি। সার উত্তোলন না করার কারন জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভালো জানে বলে ইঙ্গিত করেন। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন তারা টাকা জমা দিয়েছেন, শীঘ্রই সার পাবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের সাধারণ কৃষকের অভিযোগ, আদৌ তারা ডিলারদের কাছ থেকে কখনও এ সারটি পাননি। তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থায় এ সারের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার সিফাত আল মারুফ বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের বিসিআইসির টিএসপি বরাদ্ধকৃত ৪৯ মেট্রিকটন সার ডিলাররা উত্তোলন করেননি। তবে অনেক ডিলার টাকা জমা দিয়েছেনএবং শীঘ্রই তারা সার পাবেন।