নিয়োগে সিন্ডিকেটের কবলে খুকৃবি

3


কৌশিক দে

নিয়োগ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি)। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার নিজেই রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে নিয়োগ বোর্ডের প্রধান ও ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান খানের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম অধ্যাপক পদের প্রার্থী। এমন পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। জানা যায়, গত ২৭ জুলাই ৬৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৭ আগস্টের মধ্যে আবেদনপত্র পৌঁছানোর শেষ দিন ছিল। নিয়োগ বোর্ডের প্রধান হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান খান। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সম্ভাবনাময় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু থেকেই নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের আধিপত্যে ক্ষুব্ধ খোদ স্থানীয় রাজনীতিক ও নাগরিক নেতারাও।

তাঁদের দাবি, পথ চলার শুরুতেই নিয়োগ সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি হয়ে পড়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৫ জুলাই জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ৪৩৩ জন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ জুলাই ৩০ পদে ৬৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কাজ চলছে। এ বিজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী ৩-১০ গ্রেডের আবেদনকারীদের রকেট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত প্রার্থীদের ৬০০ টাকা পরিশোধ করে আবেদন করতে বলা হয়, যার সর্বশেষ তারিখ ছিল ২৭ আগস্ট। এসব পদে আবেদন করেছেন এমন একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিশেষ এলাকার মানুষদের স্থান দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন পদে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার ডাক পাননি বেশির ভাগ প্রার্থী। শুধু নিয়োগ সিন্ডিকেটের পছন্দের ব্যক্তিদের ডাকা হয়, যাঁদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এবারও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর রেজিস্ট্রার, পরিচালক অর্থ ও হিসাব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক, জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ নিজেদের দখলে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেটটি। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে চলছে এসব কাজ। অবশ্য এসব বিষয়ে কোনো প্রার্থীই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না।


জানা গেছে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার নিজেই রেজিস্ট্রার পদের প্রার্থী। এই পদে প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার থাকার প্রয়োজন হলেও তাঁর অভিজ্ঞতা মাত্র ৯ বছর তিন মাস। এর আগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ বোর্ডের প্রধান হলেও তাঁর স্ত্রী ছাতক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদের প্রার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান এ দুটি ঘটনাকে নীতিবহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ বোর্ডে যেখানে সভাপতিত্ব করবেন, সেখানে তাঁর স্ত্রী প্রার্থী হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের উচিত আগে থেকেই ওই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া।


অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমি মূলত সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছি। নিয়োগ বোর্ডের কেউ নই। ফলে আবেদন করতে বাধা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান খান বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডের প্রধান থাকলে পোষ্যরা আবেদন করতে পারবে না বা প্রার্থী হতে পারবে না, এমনটা কোথাও নেই। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।’