আলুও ভরসার বাইরে!

15
Spread the love

অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। হঠাৎ অস্বাভাবিক দাম বেড়ে অস্থির হয়ে উঠেছে আলুর বাজার, যা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। খুচরা বাজারে আলু এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। গত দুই দিনেই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দাম অবিশ্বাস্য। আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই নজর দেয়া উচিত। উচ্চবিত্তদের খাদ্য তালিকায় তেমন জরুরি না হলেও নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সংসারে আলুর কদর অনেক। বিশেষ করে বাজারে অন্য সবজির দাম যখন লাগামছাড়া তখন আলুই ভরসা। এখন সেই আলু কেনারও সামর্থ্য তাদের নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চলতি উৎপাদন কম হওয়া, করোনাকালে ত্রাণের সঙ্গে আলু ব্যবহার হওয়া এবং উৎপাদন মৌসুমে রপ্তানি বেশি হওয়ায় বাজারে আলুর দাম সর্বকালের রেকর্ড গড়েছে।

কারণগুলো কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা দেখার বিষয়। বর্তমানে খুচরায় বিক্রমপুর আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি আর রংপুর ও রাজশাহীর আলুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। তার মানে মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আলুর দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। আলুর দর বাড়া নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আলুর দাম আরো বাড়তে পারে আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। এজন্য তারা বাজারে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। হিমাগার মালিকদের মজুতপ্রবণতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে। আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে হতদরিদ্র মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংবার্ষিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বলছে, গত বছর ১ কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) ২ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি।

এই পরিসংখ্যান বলে দেয় আলুর সংকট থাকার কথা নয়। নানা ইস্যু সামনে এনে বাজার পরিস্থিতি অস্থির করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভ‚মিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, আলুর বাজার অস্থির হয়ে ওঠা এবং এর পেছনে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করাসহ সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিন।