‘সেই নারীকে আগেও দুইবার ধর্ষণ করেছে দেলোয়ার’

8
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট

বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের সেই নারীকে (৩৭) স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন (২৬) অস্ত্রের মুখে আগেও দুইবার ধর্ষণ করেছিলেন। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) নির্যাতনের শিকার ওই নারী জাতীয় মানবাধকার কমিশনের তদন্তদলের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ-তদন্ত) আল আহমুদ ফয়জুল কবিরের কাছে ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, শারীরিক সর্ম্পকে রাজি না হলে নিজ বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের হুমিক দিতেন।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নোয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অডিটরিয়ামে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আল আহমুদ ফয়জুল কবির।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বেগমগঞ্জ থানায় তিনিসহ তাদের তদন্ত কমিটির সদস্যরা নির্যাতিতা ওই গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেন। গৃহবধূ তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, এক বছর আগে দেলোয়ার ঘরে ঢুকে প্রথমে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। পরে তাকে যৌনকাজে লিপ্ত হতে বলেন। তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে দেলোয়ার তাকে হত্যা ও তার দলের লোকজন দিয়ে গণধর্ষণের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এর কিছুদিন পর দেলোয়ার ও তার সহযোগী কালাম ওই নারীকে তার বাড়ি থেকে বের করে একটি নৌকা যোগে বাড়ির পাশের একটি বিলে নিয়ে যান। সেখানে দেলোয়ার ও কালাম তাকে গণধর্ষণের চেষ্টা করলে হাতে পায়ে ধরে কালামের হাত থেকে রক্ষা পেলেও দেলোয়ার তাকে নৌকার মধ্যে পুনঃরায় ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে দেলোয়ার তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সবশেষে তাকে আগের স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধর করেন।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল আহমুদ ফয়জুল কবির বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতিতা বাদী হয়ে আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করবেন। আদালতে ২২ধারায় পুনঃরায় ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। আমাদের তদন্ত শেষে চূর্ড়ান্ত রিপোর্ট মানবাধিকার চেয়ারম্যান কাছে জমা দেয়া হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় মানবাধিকারের উপ-পরিচালক গাজী সালা উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামরুন নাহার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে তার বাবার বাড়ি একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে এসে তাদের ঘরে ঢোকেন। বিষয়টি দেখে স্থানীয় মাদকব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে ঢুকে অন্য পুরুষের সাথে অনৈতিক কাজ ও তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।

৪ অক্টোবর দুপুরে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এদিকে ওই নির্যাতনের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিচারের দাবিতে উত্তাল রয়েছে নোয়াখালী। মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যানারে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাসদ নোয়াখালী, জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন, জেলা যৌন হয়রানি নির্মূল করণ নেটওয়ার্ক, স্টুডেন্স অব নোয়াখালী এবং মানবিক ব্লাড ফাউন্ডেশন, একলাশপুর বাজারে গাবুয়ায় ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন। চাটখিলে মলং মুড়ি, জয়াগ মৈত্রী যুব সংঘ, স্বেচ্ছাসেবী প্যানেল অফ চাটখিল, বুলু ফোরাম সিবিএফ, এন সোশ্যাল ব্লাড ডোনেট ক্লাব, একতা ব্লাড ডোনেট সংগঠন, চাটখিল পাঁচগাও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাটখিল উপজেলার স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ একাধিক সংগঠন।