স্টাফ রিপোর্টার
করোনাকালের যাঁতাকলে সাধারণ মানুষ এবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলপি গ্যাস নিয়ে। ইতিমধ্যে খুলনায় নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম নতুন করে বেড়েছে। সিলিন্ডার প্রতি দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ টাকা হারে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষেরা ফের দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরবরাহকারিরা বলছে, কোম্পানী হঠাৎ দাম বাড়িয়েছে ফলে খুচরা বাজারে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, সিন্ডিকেটই দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, করোনার মধ্যেই গেল মে মাসের শুরুতেই এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। সেই সময় খুলনার বাজারে ১২ কেজি ওজনের গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছিল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়। এর আগে গেল বছরের ডিসেম্বরে ওই গ্যাসের দাম ছিল ৯০০ টাকা। এরপর গত চার মাসে কয়েক দফা কমে যায় গ্যাসের দাম। সর্বশেষ সাড়ে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে গ্যাসের দাম। তবে গত একমাস ধরেই দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে নতুন করে দাম বাড়ায় গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৮২০ থেকে ৮৪০ টাকা দরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, খুলনায় বর্তমানে প্রায় এক লাখ গ্রাহক এলপি গ্যাস ব্যবহার করেন। যার সিংহভাগই সরবরাহ করে বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সরবরাহ কম থাকায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে থাকে।
বিক্রেতারা জানান, খুলনায় বিক্রি হয় সাধারণত বসুন্ধরা, যমুনা, ওমেরা, ক্লিনহিট, টোটাল ও সেনা, বিএম, লাফস, বেক্সিমকো এলপি গ্যাস। বসুন্ধরা বাদে বাকি সব কোম্পানীই সিলিন্ডার প্রতি ৩০/৪০ টাকা হারে দাম বাড়িয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বসুন্ধরাও গ্যাসের দাম বাড়াবে বলে জানা গেছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খুলনা এলপি গ্যাস ডিলার সমিতির সভাপতি শেখ তোবারেক হোসেন তপু বলেন, বছরের শুরু থেকেই শুনে আসছি আন্তর্জাতিক বাজারে তেল গ্যাসের দাম কম। গ্যাসের কাঁচামাল, লিকুইড পেট্রোলিয়াম ও জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। এ বছরের এপ্রিল/মে মাসে এসে গ্যাসের দাম কমে যাওয়ার কথা। বছরের শুরুতেই পত্র/পত্রিকায় এমন খবরই প্রকাশ হয়েছে। কাঁচামাল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্যাসের দাম কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই দেশের কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ানো অন্যায় এবং অযৌক্তিক। তিনি বলেন, এ বছর করোনার দুর্যোগকালীন সময়েও কোম্পানীগুলো সিলিন্ডার প্রতি ১শ’ টাকা হারে দাম বাড়িয়েছিল। সেটা গত ২/৩ মাসে কমে যায়। এরপর নতুন করে আবার বাড়ল দাম।
সূত্রটি জানিয়েছে, এর আগে গেল বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে সিলিন্ডার প্রতি একশ’ টাকা, তার আগে গত ৭ মার্চ বৃদ্ধি পেয়েছিল সাত শতাংশ, ২০১৮ সালেও তিন দফায় গ্যাসের দাম বাড়ে। ব্যবসায়িরা জানান, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ না থাকা এবং সরকারি গ্যাসের সরবরাহ কম থাকার কারণে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়িরা বেসরকারি বোতলজাত এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। বিপুল এ চাহিদার কথা মাথায় রেখে এ অঞ্চলেও একাধিক প্রাইভেট কোম্পানি গড়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতা থাকায় এলপি গ্যাসরে দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। এতে ক্ষুব্ধ গ্রাহক।
ক্রেতা আবুল ফজল বলেন, করোনার সংক্রমনের মধ্যে কয়েকদফা দাম বেড়েছে গ্যাসের। একদিকে আয় নেই মানুষের অন্যদিকে নিত্যপন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বিপাকে ফেলবে মানুষকে। এমন অবস্থায় সরকারের উর্দ্ধতন মহলের কঠোর হওয়ার দাবি জানান তিনি। তার মত একই দাবি করেছেন অধিকাংশ ভোক্তা।
ক্ষুদ্র গ্যাস ব্যবসায়ী রাসেল গাজী বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানীগুলো। আমরা তাদের নিকট থেকেই সিলিন্ডার নিয়ে বিক্রি করে থাকি। মাসের শুরুতে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয় যে দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা ১০/২০ টাকা লাভ করে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করছি।