কিন্ত বাবা হলেন না কেউ

19
Spread the love

ফলোআপ: কন্যা সন্তানের মা হলেন সেই মানষিক প্রতিবন্ধি

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ):

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের সেই মানষিক প্রতিবন্ধি একটি ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। শুক্রবার বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি এ সন্তান প্রসব করেন। সকালে প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে নিজ বাড়িতে আশ্রয় ও সেবাদানকারী উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ ছাকিরন দম্পতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মিডিয়াকর্মিদের সহযোগীতায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সাথে চেষ্টা করার পর বিকেল ৪ টার দিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। অজ্ঞাত অসহায় মানষিক প্রতিবন্ধির চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ খবর নিচ্ছেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা।

উল্লেখ্য, আনুমানিক ২২/২৩ বছরের পরিচয়হীন এক মানষিক প্রতিবন্ধি মহিলা উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। কখনও ময়লা কাপড় চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধলঙ্গ অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কি যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসে। আবার কখনও দেখা যায় ঠান্ডা মেজাজে। কিন্ত গত সপ্তাহ খানেক আগে  দিন আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিলনা কোন নড়াচড়া। সেই সময়ে পথচারী ও গ্রামের লোকজন ভীড় শুরু হয়। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। কিন্ত অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী,আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা।

এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই বেডে শুয়েই সে শুরু করে অসহ্য পাগলামী। অস্থির করে তোলে গোটা হাসপাতাল এলাকা। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করেই আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান। এরপর আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অস্থিরতার কারনে সকলেই এড়িয়ে যান। কিন্ত এমন অবস্থায় অসুস্থ পাগলীকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী। গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে সেবা যতœ করতে থাকেন। দিনমজুর আমজাদের অভাবের সংসার হলেও তার স্ত্রী ছাকিরন নেছা নিজের সংসারের সদস্যের মত করে সেবা যতœ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাদের এই মহত্বের বিষয়টি তুলে ধরে দিনমজুর আমজাদের মানবিকতার দৃষ্টান্ত শিরোনামে দৈনিক খুলনাঞ্চালে প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ হাসপাতালে এই প্রতিবন্ধি ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে বেজায় খুশি আমজাদ – ছাকিরন দম্পতি।

কালীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, ভ’মিষ্ঠ হওয়ার আগে সাভাবিক না থাকায় ছোট্্র একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক একনও সুস্থ আছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে অসহায় প্রতিবন্ধির ব্যাপারে কখা বলেছেন। যে কোন প্রয়োজনেই তিনি তার পাশে থাকবেন।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, এমন অসহায় প্রতিবন্ধির পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে জানান, প্রতিবন্ধি মা ও সদ্যজাত নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।