ঢাকা অফিস
অস্ত্র মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তার ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। উভয় সাজা একসাথে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর্যাবেক্ষেণ বিচারক বলেন, ‘সাহেদ অত্যন্ত চালাক ও দুরন্ত ব্যাক্তি। আমাদের এই সমাজে সাহেদের মতো ভদ্র বেশে অনেক লোক রয়েছে। যা এ মামলার দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। সাহেদ ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়িটি কিনেছে। কিন্তু সে আদালতের কাছে তা অস্বীকার করে। সাহেদ তার জানা সত্ত্বেও আদালতের নিকট মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। সাহেদের গাড়িতে অস্ত্র রাখা প্রমাণিত হাওয়ায় সে আদালতের কাছে কোন প্রকার অনুকম্পা পেতে পারেনা বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়। রায়ে সন্তেুাষ প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাহেদ যে অপরাধী তা মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এই রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, সাহেদ নিজ হেফাজতে অবৈধ পিস্তল রাখায় যাবজ্জীবন কারাদ- এবং গুলি রাখায় ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। রায়ে তারা সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি। সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন,‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো’। এদিন রায় ঘোষণার আগে সাহেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলায় ১৪ জনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যায় সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়। করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকার থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা করা হয়।
৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। মামলাটির ৮ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। উল্লেখ্য, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাহেদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে।