ঢাকা অফিস
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু এবং নিজে সশরীরে ১৬ বার উপস্থিত হয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি (সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষ) আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ)-র ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চ্যুয়াল ভাষণে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বের নেতারা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চ্যুয়াল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা ভবিষ্যৎ চাই, জাতিসংঘ আমাদের প্রয়োজন: বহুমুখীতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিতের মাধ্যমে। ’
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চ্যুয়াল সভার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। ১৯৭৪ সালে এই কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সদ্য স্বাধীন দেশের সরকার প্রধান হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও এই কক্ষে এর আগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দের ডাক দিয়েছি। সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি আমার ১৭তম বক্তৃতা।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় দুঃসময় অতিক্রম করছি। জাতিসংঘের ইতিহাসেও এই প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্কের সদরদপ্তরে সদস্য দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পৃথিবীতে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি আছেন যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এতবার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতার পরও আমাদের ৫.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমাদের উদ্যোগ ও এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি।’
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।’