প্রকৃতির অফুরন্ত দানে সমৃদ্ধ গ্রামবাংলা আবহমান কালের এক চিরায়ত ঐতিহ্য। সুজনা, সুফলা, শস্যশ্যামলা বাংলার উর্বর পলিমাটিও এক অকৃত্রিম সম্পদ, যা এদেশকে হরেক রকম সম্ভারে পূর্ণও করে দিয়েছে। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও আমাদের অর্থনীতির মূল হাতিয়ার। সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের প্রাত্যহিক চাহিদায় কৃষিপণ্যের ভূমিকা যুগান্তকারী। নদীবিধৌত বাংলার মৎস্য সম্পদ হরেক প্রজাতির মাছে পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতেও অবদান রেখে যাচ্ছে। নৈসর্গিক অপার সম্ভাবনায় পল্লী জননীর কোলে লালিত সন্তানরা তাদের দৈনন্দিন জীবন প্রবাহকে নানামাত্রিকে ভরিয়ে তুললেও সমস্যা এবং সঙ্কটও পিছু ছাড়ে না। অসচেতন আর নির্লিপ্ত মনোবৃত্তি তাদেরকে চারপাশের হরেক রকম বিপন্নতা থেকে মুক্তি দেয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে সমস্ত আধুনিক কর্মপ্রয়াসে গ্রামকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পৃক্ত করেছে। উন্নয়নের সময়োপযোগী জোয়ার কৃষি অর্থনীতিকেও স্পর্শ করে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রাসঙ্গিক চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত অবারিত কর্মযোগকে যুক্ত করতে সময় লাগেনি। কৃষি অর্থনীতি আজ সমস্ত বিপন্নতাকে জয় করে অগ্রগামিতার জোয়ারকে এগিয়েও দিয়েছে। যদিও মাঝে-মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ প্রতিকূল পরিবেশে বিপন্ন মানুষকে দুঃসহ পথ পরিক্রমার আবর্তে ফেলে দেয়। তারপরও গ্রামবাংলা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমুন্নত রেখে সাধারণ মানুষের জীবন প্রবাহে স্বাচ্ছন্দ্যের ছায়াও দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মপ্রকল্প ‘আমার শহর, আমার গ্রাম’ রূপায়ণে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ দেশের এক অনন্য অর্জন। তেমন সাফল্য আরও গণমুখী করতে সরকার নতুন কিছু প্রকল্প গ্রামের আধুনিকায়নে সংযুক্ত করেছে। কৃষিপণ্য তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু আর্থিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষ এখনও অনেক বিপত্তি, বাধা এবং সমস্যাসঙ্কুল পরিবেশকে উত্তীর্ণ করতেও হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি তারা নিজেরাও জানে না তাদের অধিকারের মাত্রা কতখানি কিংবা সমস্যাসঙ্কুল যাত্রা পথ কিভাবে অতিক্রম করা যায়। প্রধানমন্ত্রী এবার সেখানেই তাঁর নজরদারি নিবিষ্ট করেছেন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজাল, জঙ্গী তৎপরতা, নারী ও শিশু পাচার এমন সব নিত্য বিপন্নতাকে মোকাবেলা করতে আইনী সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরী বলে সরকার মনে করছে। অভ্যন্তরীণ এই সব ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলে সার্বিক অর্জন মাঝ পথে হোঁচট খেতে পারে। স্থানীয়ভাবে আপদ-বিপদ মোকাবেলায় জনসচেতনতা বাড়াতে বিশেষ দশটি উদ্যোগ গ্রামবাসীদের সামনে নিয়ে এসেছে। যাতে তাদের সচেতন দায়বদ্ধ উপস্থিত সঙ্কট নিরসনে অবদান রাখতে পারবে। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করে তাদের ভেতরের সজাগ দৃষ্টি উন্মুক্ত করতে সরকার ব্যয় করবে ১০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সহায়ক এই প্রকল্প অনুমোদনও দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক তহবিল (একনেক)। ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন, ৩১৬টি পৌর এলাকা এবং সিটি কর্পোরেশন এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশীদার হবে। নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রগামিতায় বর্তমান সরকারের নিরন্তর কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর এক অনন্য যুগান্তকারী পরিকল্পনা। যা সারা বাংলাদেশে সম্প্রসারিত হয়ে গ্রামবাংলাকেও আধুনিক পথযাত্রায় উন্মুক্ত করবে। গ্রামকে তার ঐশ্বর্যিক মর্যাদায় অক্ষুণœ রেখে আধুনিক গ্রাম তৈরির মহাপরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করা সময়ের যৌক্তিক দাবি।