টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না শামিম

1
Spread the love

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বাবার সঙ্গে দোকানে কাজ করেও এসএসসিতে গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েছে শামিম কবির নিরব। কলেজে ভর্তি হতে প্রয়োজন ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু গরিব বাবার পক্ষে এককালীন ১৪ হাজার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই কলেজে ভর্তি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে নিরবের পরিবার। সাতক্ষীরা শহরের শিশু হাসপাতালের বিপরীতে বাবা সিদ্দিক মোড়লের সঙ্গে চা বিক্রি করে শামিম। প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাবার কাজে সাহায্য করে সে। মাঝে মধ্যে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পড়াশুনা করে। এভাবেই এসএসসিতে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ পেয়েছে শামিম। কিন্তু টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধের পথে। সে ভর্তির জন্য কলেজ চয়েসে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজসহ ৫টি কলেজ চয়েস করে অনলাইনে আবেদন করে। যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজের সুনাম শুনে সেটাই প্রথম চয়েস দিলে সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সেখানে ভর্তি হতে হোস্টেল খরচসহ এককালীন প্রায় ১৪ হাজার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে কিছু টাকা সাহায্য পেলেও ১৪ হাজার টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরা সিটি কলেজ এলাকায় মাত্র ৫ শতক জমিতে বাবা-মা তিন ভাইসহ ৫ জনের বাস। চায়ের দোকানের আয়ের ওপর নির্ভর ৫ জনের সংসার। সব বিষয়ে জিপিও-৫ পেয়েও হাসি নেই শামিমের মুখে। তার স্বপ্ন ভর্তি হবে ঢাকার নটেরডেম কলেজ অথবা যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজে। কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। করোনার লকডাউনে চায়ের দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে দুই মাসের বেশি সময়। ছেলের এত ভালো রেজাল্টেও মানুষের মিষ্টি মুখ করাতে অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হয়েছিল।

শামিম বলে, ‘দরিদ্র পরিবারে জন্ম, করার কিছু নেই। বাবা চায়ের দোকান একা সামলে উঠতে পারেন না। তাই তার কাজে সাহায্য করা করেও আল্লাহর রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল এসেছে। আমার স্বপ্ন ছিলো ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার। সেটাতো হলো না। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু ১৪ হাজার টাকার মতো লাগবে। সেটা আবার বাবা জোগাড় করতে পারছে না। কী হবে জানি না। এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।’ শামিমের বাবা সিদ্দিক মোড়ল বলেন, ‘ছোট একটা চায়ের দোকানে ৫ জনের সংসার চলে। শামিম আমার সঙ্গে চা বিক্রির কাজে সাহায্য করে ও বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমাদের ৫ জনের সংসার ঠিক মতো চলে না। ওকে পড়াবো কীভাবে? কোনও দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখা পড়ার ভার বহন করে, তবে কৃতজ্ঞ থাকবো। তাহলে সে পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’ কেউ সহায়তা করতে চাইলে এই নম্বরে ০১৭২৭০১৩৯৮৪ যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন শামিমের পরিবার।

সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শামিম ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ও পরিশ্রমী। কাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষায় ১৩৩ জন ছাত্রের মধ্যে মধ্যে ২য় হয়। কাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরিবারের অভাব-অনটন তাকে দমাতে পারেনি। যশোর ক্যান্টমেন্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমাদের স্কুল থেকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। সে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক অনেক বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হবে। সেজন্য প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবান মানুষরা এগিয়ে না আসলে শামিমের মতো একজন মেধাবী ছাত্রকে আমরা হারাবো।