মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের মণিরামপুরে করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্থ পারিবারিক গরু খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। সব ইউপির মাধ্যমে চলছে এই তালিকার কাজ। অন্য ইউনিয়নের তালিকা প্রস্তুত বিনা টাকায় হলেও বিপত্তি ঘটেছে রোহিতা ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের তালিকা প্রস্তুতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, রোহিতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনছার সরদার ও ইউপি সচিব কৃষ্ণ গোপাল মুখার্জি লোকপ্রতি সাড়ে ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। ট্রেড লাইসেন্সের নামে তারা এই অর্থ হাতিয়েছেন।
যদিও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, তালিকা তৈরিতে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র খামারির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, মোবাইল নম্বর ও বাড়িতে পালিত গরুর ছবি ছাড়া আর কিছুই লাগবে না।
তাছাড়া বাড়িতে দুই-চারটা গরু পালন করলে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে! চেয়ারম্যান ও সচিবের এটা কোন আইন সেটাই এখন প্রশ্ন। আর প্রাণি সম্পদ অফিসের সংশ্লিষ্ট ইউপিতে কর্মী থাকলেও তাকে বাদ রেখে কেন মেম্বর, চেয়ারম্যান বা সচিব এই তালিকা করছেন সেটাও স্পষ্ট নয়।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্র জানায়, দুইটি দুগ্ধদানকারী গরু দিনে ১০ কেজি করে দুধ দেয় এমন দুই-পাঁচটি বা পাঁচ-নয়টি গরু পালনকারী কতজন ক্ষুদ্র খামারি করোনাকালীন মণিরামপুরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন; ঢাকা থেকে তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী মণিরামপুর থেকে দুই হাজার চারশ’ খামারির তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। এই আবেদনকারিরা মোবাইলের মাধ্যমে সরকারিভাবে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পেতে পারেন।
রোহিতা ইউপির সরণপুর গ্রামের ফুরকান আহমেদ বাড়িতে দেশি জাতের ৫-৭টি গরু পালন করেন। ফুরকান আহমেদ বলেন, আবেদন করতে যেয়ে আমার ৬১০ টাকা খরচ হয়েছে। চেয়ারম্যান আবেদনে সহি করেন কিনা সেই ভয়ে টাকা দিছি। সরকারি টাকা পাব কি পাব না তাও জানিনে।
শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রাণি সম্পদ অফিসের কর্মী আছে। তাকে দিয়ে ১৭০ জনের তালিকা প্রস্তুত করিয়েছি। কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেওয়া হয়নি।
রোহিতা ইউপি সচিব কৃষ্ণ গোপাল মুখার্জি বলেন, আবেদনকারীদের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৫৩০ টাকা করে নিয়েছি। টাকার রশিদসহ তালিকা অফিসে জমা দেওয়া হবে।
বাড়িতে দুই-চারটা গরু পালন করলে ট্রেড লাইসেন্স লাগে কিনা এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, এরাতো কোন সময় লাইসেন্স করিনি। তাই এই সুযোগে করিয়ে নিলাম। অবশ্য এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে সচিব কৃষ্ণ গোপাল মুখার্জি একাধিকবার নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
ওই ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনছার সরদার বলেন, ট্রেড লাইসেন্সে সাড়ে ১২শ’ টাকা খরচ। আমরা কমিয়ে ৯৫ জন আবেদনকারীর কাছ থেকে ৫৩০ টাকা করে নিয়েছি।
মণিরামপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আবুজার ছিদ্দিকী বলেন, করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্থ পারিবারিক খামারিদের তালিকা তৈরিতে আমার অফিসে কোন টাকা লাগে না। চেয়ারম্যান-সচিবরা টাকা নিলে সেটা তাদের ব্যাপার।
মণিরামপুরের ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।