দিন দিন অরক্ষিত হয়ে উঠছে মাঠ প্রশাসন। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার ওপর নিকৃষ্টতম কায়দায় বর্বর হামলার ঘটনা তার বড় উদাহারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই। মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদধারী যদি অরক্ষিত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১০ জন ইউএনও এবং একজন এসিল্যান্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রত্যেকটি ঘটনার পর মামলা হয়েছে। কিন্তু বিচার এখনো হয়নি। এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটলে মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। হামলাকারীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এমন ঘটনা বাড়ছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সর্বশেষ গত বুধবার গভীর রাতে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম (৩৫) ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের (৬০) ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা রাতের আঁধারে সরকারি বাসভবনের পেছনের বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে ঢুকে। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে তাদের মারাত্মক জখম করে। তাদের সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন। ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় গোয়েন্দাদের অনুমান এবং আটককৃতদের জবানবন্দি থেকে চুরির উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশ, অতঃপর অপরাধ সংঘটনের যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা মেনে নেয়া সত্যিই কঠিন। কঠিন এ কারণে যে, চুরিই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে কোনো কিছু না নিয়েই অপরাধীরা স্থান ত্যাগ করল কেন? মামলাটি গুরুত্ব নিয়ে বিবেচনায় আনা উচিত। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা বিচার না পাওয়ায় অপরাধীরা আশকারা পেয়ে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে। ওই আশকারা থেকে সাহস পেয়েই দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে নিজ ঘরে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা ওয়াহিদা খানমকে করতে হয়েছে এবং এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি যে সময় পার করছেন তা একজন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তার জীবন কতখানি অরক্ষিত তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে সশস্ত্র আনসার সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখলেও সার্বক্ষণিক গানম্যানের পক্ষে মত দিয়েছেন ইউএনওরা। সশস্ত্র আনসার নিয়োগ দিয়ে এই সমস্যার টেকসই সমাধান হবে কিনাÑ এই প্রশ্ন সামনে এসে যায়। সমাজে, রাজনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। কতিপয় দুষ্কৃতকারীর কারণে এই মহৎ গণতান্ত্রিক উপাদান কোনোভাবেই নস্যাৎ হতে দেয়া যায় না। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তার জীবন সুরক্ষিত করা প্রয়োজন।