বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্মৃতিসৌধটি ভেংগে পড়ার আশংকা

2
Spread the love

বেনাপোল প্রতিনিধি

যশোরের চৌগাছার মুক্তারপুর গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্মৃতিসৌধটি স্থায়ী সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তারপুর বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ সংরক্ষণ কমিটি ও ভাষণের প্রত্যক্ষদর্শীরা। মাটি ধ্বসে স্মৃতিসৌধটি ভেঙে পড়ার আশংকার খবরে প্রাথমিকভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী মাটি ভরাট করে দেন। কিন্তু স্মৃতিসৌধটি স্থায়ী সংস্কার করার একান্ত দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
এলাবাসী জানান, ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে আইনজীবী মসিয়ুর রহমানের সাথে বাইসাইকেলে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন সীমান্তবর্তী চৌগাছা অঞ্চলের মুক্তারপুর গ্রামে। কিন্তু পথে কয়ারপাড়ার আহমদ নগরে পৌঁছলে প্রচন্ড কাদায় আটকে যায় সেই বাইসাইকেল। হাঁটু সমান কাদা পার হয়ে স্থানে যাওয়া সম্ভবপর হচ্ছিল না।
এ অবস্থায় গ্রাম থেকে একটি গরুর গাড়িতে করে যান মুক্তারপুর গ্রামে। কয়ারপাড়া মাঠের মধ্যে এক পর্যায় আটকে যায় বঙ্গবন্ধু ও মসিয়ুর রহমানকে বহনকারী গরুর গাড়িটি। এ সময় ইছাপুরের সিরাজুল ইসলাম নিজের পরিহিত লুঙ্গি কাচা (হাঁটুর ওপরে লুঙ্গি পেচিয়ে মাজার সাথে বাঁধা) দিয়ে কাদায় নেমে পড়েন। গরুর গাড়ির চাকা সজোরে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দেন। এবং মুক্তারপুর গ্রাম পর্যন্ত তিনিসহ আরো কয়েকজন গরুর গাড়ি অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যান।

মুক্তারপুর গ্রামে পৌঁছালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মসিয়ুর রহমান দুপুরে ভাটাই বিশ্বাসের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করেন। বিশ্রামের পর বিকেলে মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে জনসভায় বক্তব্য দেন। এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন, তৎকালীন চৌসিংহঝুলী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ও তৎকালীন ঝিকরগাছা থানার সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জোহা ভাটাই বিশ্বাস। এ সময় স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

জনসভার প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী মুক্তারপুর গ্রামের দাউদ হোসেন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্যে এবং তার কথা শোনার জন্যে জনসভায় অংশগ্রহণ করি। একই সাথে জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধুর হাতে হাত রেখে আওয়ামী লীগে যোগদান করি।
তিনি আরো বলেন, ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ১৯৫৪ সালের নির্বাচনটি তোমরা ভালোভাবে করবে। আমি জেলখানা থেকে বের হয়ে এসেছি। আবার আমাকে গ্রেফতার করা হবে। তাই তোমরা সজাগ থাকবে। হায়েনারা আমার পিছু ছাড়েনি।

এদিকে জনসভার দুইদিন পর জনসভার সভাপতিত্বকারী সামসুজ্জোহা ভাটাই বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সেই স্মৃতি আজো ভোলেননি এ অঞ্চলের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যে গ্রামবাসীর অনুরোধে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে। কিন্তু স্মৃতিসৌধটি অযন্তঅবহেলায় পড়ে থাকে। এই খবরে যশোর-২ চৌগাছা-ঝিকরগাছা

চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী জানান, আমরা নিজ উদ্যোগে স্থানটিতে মাটি ভরাট করে দিয়েছি। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাটি ভরাটের ফলে প্রাথমিকভাবে কিছুটা কাজ হয়েছে। তবে স্মৃতিসৌধটি ও আশেপাশের এলাকা পাকাকরণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন। তা না করা হলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত স্মৃতিসৌটি ভেঙে কপোতাক্ষ নদে বিলীন হতে পারে।

যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সংস্কারের জন্যে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই বরাদ্দের ফলে জরুরি ভিত্তিতে স্মৃতিসৌধটি সংস্কার করা হয়।কিন্তু চলতি মৌসুমে স্মৃতিসৌধের পশ্চিমপাশে প্রবল বৃষ্টিতে মাটি সরে বড় খাদের সৃষ্টি হয়। ফলে স্মৃতিসৌধটি ভেঙে পড়ার আশংকা দেখা দেয়। পুনরায় এটি সংস্কার করা হবে।