বিভৎস, নির্মম, পৈশাচিক

4


যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যে ঘটনা ঘটে গেল তাকে বিভৎস, নির্মম কিংবা পৈশাচিক বললে ভুল হবে। তা আরও জঘন্য। পুলিশের তদন্তে সেই বর্বর ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ উঠে এসেছে। যা শুনে যে কোনো স্বাভাবিক মানুষই আতঙ্ক আর ভয়ে শিউরে উঠবে। হৃদয়বিদারক সেই ঘটনাটি ঘটে ১৩ আগস্ট। প্রথমে বলা হয়েছিল, উন্নয়ন কেন্দ্রের ভেতর কিশোরদের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন কিশোর নিহত হয়েছে। পুলিশ এবং গণমাধ্যমকে ওই তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন সেই কেন্দ্রেরই সাইকো সোশ্যাল কনসালট্যান্ট মুশফিকুর রহমান। কিন্তু পুলিশের তদন্তে পরে জানা গেল, তার দেয়া বিবরণ ছিল মিথ্যা, সাজানো আর পরিকল্পিত। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিলেন মুশফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। এর কারণ, তারা নিজেরাই ওই কিশোরদের নির্মম নির্যাতন করে তীব্র রোদে ফেলে রাখেন। এক পর্যায়ে তিন কিশোরের মৃত্যুর পর হাসপাতালে পাঠান। এমন কি পুলিশকে পর্যন্ত তারা ঘটনার কথা জানাননি। ঘটনার ৬ ঘণ্টা পর হাসপাতাল থেকে জানার পর তদন্তে নেমে ‘সর্ষের মধ্যে থাকা সব ভূতকে’ বের করে ফেলে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ ৫ শীর্ষ কর্মকর্তাকে। অথচ যাদের কাছে নিরাপদ থাকার কথা ছিল যে কিশোরদের, তারাই তুচ্ছ ঘটনায় এমন পৈশাচিক কায়দায় সেই কিশোরদের হত্যা করলেন! একজন আনসার সদস্যকে তাৎক্ষণিক চুল কেটে না দেয়ার অপরাধে এত বড় শাস্তি! অথচ সেদিন প্রায় দুইশ জনের চুল কেটেছিল ওই কিশোরটি। হাত ব্যথা হয়ে যাওয়ায় পরে চুল কেটে দেব বলেছিল। এটাই তার অপরাধ! ঘটনার দুইদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে যশোরের পুলিশ সুপার জানান, কর্মকর্তারা বন্দি কিশোরদের ওপর শুধু পৈশাচিক নির্যাতনই চালাননি। না খাইয়ে তাদেরকে বিনা চিকিৎসায় রোদের মধ্যে ফেলে রাখেন। তার আগে প্রত্যেক কিশোরকে জানালার গ্রিলের ভেতরে দুই হাত ঢুকিয়ে, পা বেঁধে, মুখে কাপড় ঢুকিয়ে লাঠি আর লোহার পাইপ দিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যাপক পেটায়। আঘাতে আঘাতে কিশোররা অজ্ঞান হয়ে নেতিয়ে পড়ে। পরে জ্ঞান ফিরলে আবারও একই কায়দায় পেটানো হয়। নানান পরিস্থিতিতে যে সব শিশু-কিশোর বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, ওই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি ছিল, তাদেরকে দেখে রাখার পাশাপাশি সংশোধনের দায়িত্বও ছিল সেই কর্মকর্তাদের ওপর। কিন্তু তারা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে ভয়ংকর অপরাধে লিপ্ত হলেন! রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন! আমরা জানি, সঠিক নজরদারী না থাকায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একই। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নানা কৌশলে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই ব্যস্ত। সেখানে থাকা কিশোরদের একটি অংশকে নিজেদের পক্ষে রেখে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত থাকে তাদের কেউ কেউ। আমরা মনে করি, কঠোর শাস্তি, শক্ত নজরদারী আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে, এমন পৈশাচিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।