স্টাফ রিপোর্টার
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের পিয়ন হাবিবুর রহমান। হুমকি-ধমকিতে তিনি প্রতিনিয়ত পরাস্ত করেন ওই অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত।
তার মতের বিরুদ্ধে কোন কিছু ঘটলেই অফিস থেকে বের করে দেওয়া কিংবা প্রাণহানির হুমকিও দেন। তার ক্রমাগত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসেও আসতে রাজি হচ্ছেন না অনেকে।
কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের কাছে কোনোকিছু নিয়ে নালিশ করলেও ক্ষিপ্ত হন তিনি। কর্মকর্তাদের লাথি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেবেন এবং এরপরে অফিসে এলে গুলি করে মারবেন বলে হুমকি দেন। গুলি করে মারলেও তার কিছুই হবে না জানিয়ে চলেন বুক ফুলিয়ে।
অফিসে এহেন গুণ্ডামি আচরণ করা হাবিবুর রহমান নিজেকে শেখ পরিবারের বংশধর বলে পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তথ্য অফিসের এক কর্মচারীর ছেলের চাকরি দেওয়ার নাম করে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অফিসের এক সহকারীকে বিসিএসে কনফার্ম করার জন্যও টাকার প্রস্তাব দেন। এছাড়া অন্য কর্মচারীদের ছেলেমেয়ের চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন সময়ে টাকার প্রস্তাব দিয়ে আসছেন হাবিবুর রহমান।
চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়েও হাবিবুর রহমান নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের উপরও খবরদারি করেন।
খুলনা অফিসে যোগদানের আগে ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালায় অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) খুলনা মহানগরীর পিটিআই মোড়ের খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ শুরুর প্রাক্কালে হাবিবুর রহমান তার মোবাইলে নেটওয়ার্ক সংযোগ না পাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অফিসের বাইরের কাকে যেন চাপাতি নিয়ে আসতে বলেন এবং উপপ্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল, সহকারী তথ্য অফিসার মো. আতিকুর রহমান, টেলেক্স অপারেটর মো. মিজানুর রহমানসহ সবাইকে কোপাবেন বলে হুমকি দেন।
তার হুমকির মধ্যে ‘তোরা সবাই রাজাকার, তোরা বাইরে বের হ’ সবকটাকে কোপাবো’ কথাটি বারবার বলেন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় মিজানের গায়ে হাত তোলেন এবং কিল-ঘুষি দেন। তখন উপস্থিত কর্মচারীরা তার রোষানল থেকে নিরাপদ থাকার উদ্দেশ্যে তাকে অফিস থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দিতে বাধ্য হন। তারপর বাইরে থেকে প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালনরত মো. জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তুই অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখলে তোর হাতের আঙুল কেটে ফেলবো’। অনেকক্ষণ পর্যন্ত উচ্চস্বরে সবাইকে লক্ষ্য করে তিনি আরও বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দেন। পুরো ঘটনাটি অফিসের একজন গোপনে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
একজন পিয়নের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ ও তার শাস্তির দাবি জানান অনেকে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে পিয়ন পদে হাবিবুর রহমান যোগ নেন। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অহেতুক কারণে নিয়মিত অসদাচারণ করে আসছেন। হাবিবুর রহমান মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সিমাখালীর ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত কুটি মিয়ার ছেলে।
এ বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে উপপ্রধান তথ্য অফিসারকে জানানো হয়েছে। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং বিষয়টি অফিসের নিয়মিত কার্যক্রমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব দেখিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন হুমকি দেন।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস যে ভাড়া ভবনে অবস্থিত তার উপরের তলায় থাকা আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের কাছে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ অফিসের মর্যাদা বিশেষভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা একটি সরকারি অফিসের জন্য মোটেই কাম্য নয়।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার ম. জাভেদ ইকবাল বলেন, হাবিবুর রহমান খুলনা অফিসে যোগদানের আগে ঢাকা অফিসে থাকাকালে দু’বার বরখাস্ত করা হয়। শর্তসাপেক্ষে তাকে খুলনা অফিসে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি খুলনা অফিসে আসার পর থেকে সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। শান্তিপূর্ণ অফিসে অশান্তি তৈরি করেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার অফিসের ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা ঢাকা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। তথ্য অধিদপ্তর চূড়ান্তভাবে একবার তাকে বরখাস্ত করে। পরে আদালতে আপিলের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় অফিসের শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অসাদারচরণ না করার শর্তে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।
এসব বিষয়ে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুর জামান শেখর আমাকে চাকরি দিয়েছেন। ঢাকা অফিসে এক নারী আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে আপিল করে আমি চাকরি ফিরে পাই। খুলনা অফিসের আমি ছাড়া সবাই জামায়াত-শিবিরের। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করে। তারা সবকিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করে। আমার ঘরে বউ নেই। দু’টি বাচ্চা নিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি।
আপনি কোন সূত্রে শেখ বংশের লোক আপনার বাবার তো মিয়া বংশ, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা প্রথম বিয়ে করছিলেন শেখ বংশে। যে কারণে আমরা শেখ বংশের। বিষয়টি আপনি খতিয়ে দেখতে পারেন।