খান নাজমুল হুসাইন, সাতক্ষীরা
ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিমিটেডের বিরুদ্ধে রক্তের গ্রুপের ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাবেয়া বেগম(৬০) নামের এক বৃদ্ধা। তিনি সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার মৃত আব্দুর গফুর সরদারের স্ত্রী। তার শরীরে নতুন রক্ত দেওয়ার সময় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অন্যান্য স্বনামধন্য হাসপাতাল প্রদত্ত রক্তের গ্রুপকে তোয়াক্কা না করে ইসলামী হাসপাতালে বাধ্যতামূলক রক্তের গ্রুপিং করানো ও ভুল রিপোর্ট প্রদান করে ওই বৃদ্ধা রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।
ভুক্তভোগী রোগীর ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা জানায়, ‘আমার মায়ের লিভারের সমস্যা আছে। দীর্ঘদিন থেকে মাঝে মাঝে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রায় বছরান্তে নতুন রক্ত দেয়া লাগে। ইতোপূর্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আমার মায়ের শরীরে রক্ত দেয়া হয়েছে। আমার মা রাবেয়া বেগমের রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভ’ হওয়ায় যথারীতি বি পজিটিভ রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি কিছুদিন আগে আমার মা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুনরায় রক্ত দেয়ার জন্য বলা হয়।
তারপর গত ১৬ জুলাই আমার মাকে রক্ত দেয়ার জন্য সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমার মায়ের রক্ত দেয়ার পূর্বের কাগজ দেখালেও তারা বলে এখানে বাধ্যতামূলক রক্তের গ্রুপিং করতে হবে। রক্তের গ্রুপিং না করে আমরা কোন রোগীর শরীরে রক্ত দেই না। এজন্য ইসলামী হাসপাতালে পুনরায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়। সেখানে আমার মায়ের রক্তের গ্রুপ আসে ‘এবি পজিটিভ’। যার বিল নম্বর-২৮৮০৭৫’। তিনি আরও জানান, ‘সে সময় রক্ত দেওয়ার জন্য এবি পজিটিভের ডোনারও প্রস্তুত করা হয়েছিলো। হঠাৎ আমার মনে হয় মানুষের শরীরের রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয় কীভাবে? তাই আমিভেবে চিন্তে ইসলামী হাসপাতাল থেকে আমার মায়ের রক্ত দেয়নি।
পরে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করি। সেখানে বি পজিটিভ আসে এবং সেখান থেকেই আমার মায়ের শরীরে রক্ত দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমার মা এখন সুস্থ্য আছে’। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিমিটিডের পরিচালক আনোয়ার হোসাইন জানান, ‘অনেক সময় ভুল হতে পারে। তবে সন্দেহ হলে ওই রিপোর্টটা রিপিট করে পুনারায় কি রেজাল্ট আসে তা দেখা দরকার ছিলো। তিনি আরও জানান, ‘আমরা ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা,খুলনা সহ বিভিন্ন হাসপাতালের রক্তের গ্রুপ রিপোর্টের ব্যতিক্রম রিপোর্ট পেয়েছি এবং আমরা রিপিট করে তা পুনরায় আমাদের প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করা রক্তের গ্রুপের উপর ভিত্তি করে রোগীর শরীরে রক্ত দিয়েছি। অনেক সময় সদর হাসপাতাল থেকেও ভুল রিপোর্ট আসে আমরা তা রিপিট করে সঠিক রিপোর্ট তৈরি করেছি। সুতরাং রক্তের গ্রুপের বিষয়ে যদি ভুল হয় তবে তা রিপিটের সুযোগ দিতে হবে।
রিপোর্টটের আগে অভিযোগ হলে বলা যায় এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত’। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, ‘একজন মানুষের শরীরে যে রক্তের গ্রুপ থাকে সেই গ্রুপের রক্ত ছাড়া অন্য কোন রক্ত দিলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। তবে ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল লিমিটেড যদি এমন ভুল রিপোর্ট দেয় তাহলে সেটা খুবই দু:খজনক’। তিনি আরও জানান, ‘রোগীর স্বজনরা অভিযোগ দিলে অবশ্যই তদন্ত করে ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরা লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।