রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমের কুকর্মের যেন শেষ নেই। গ্রেপ্তারের পর থেকে ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা সাহেদের কোনো না কোনো অপকর্ম সামনে আসছে প্রতিদিনই। ভয়ে আর সংশয়ে এতদিন যারা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি, এখন তারাই যেন অভিযোগের ডালি নিয়ে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন।
বড় মাপের এই প্রতারক সাহেদকে গ্রেপ্তারের দুই পর গত শুক্রবার প্রতারিত, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তথ্য, অভিযোগ চেয়ে একটি হটলাইন নম্বর ও ইমেইল আইডি প্রকাশ করে র্যাব। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাহেদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতারণার ৯২টি অভিযোগ জমা পড়ে! অল্প সময়ে অভিযোগের এই সংখ্যা দেখে নিশ্চিত করেই বলা যায়, তার প্রতারণার আরও অনেক অনেক তথ্যই সামনে আসবে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের শঙ্কার জায়গাটা অন্যখানে। অতীতের বহু অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছে, এদের মতো প্রতারকরা আইনের ফাঁক-ফোকর গলে বের হয়ে যায়। আর অর্থের জোরে এরা কতকিছুই যে করতে পারে, তার প্রমাণ সাহেদ নিজেই। তাই সেই সুযোগ যেন সে না পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার জানিয়েছেন, ‘সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা নতুন মামলাগুলোর চার্জশিট দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়া হবে। পাশাপাশি পুরোনো মামলাও নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে। শুধু তাই-ই নয়, সাহেদকে এতদূর আসতে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। কিভাবে তাকে ‘সরকার স্বীকৃতি’ দেয়া হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও আমরাও একমত পোষণ করি, সাহেদের পাশাপাশি তাকে যারা এই পর্যায়ে আসতে নানা রকম সহযোগিতা করেছে, সুবিধা নিয়েছে; তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভয়াবহ প্রতারণা বন্ধ হবে। সাহেদ শুধু করোনাভাইরাস টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট করে বিশাল অঙ্কের অর্থই হাতিয়ে নেয়নি, দেশে করোনার বিস্তার ঘটানোর মতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধও করেছে। শনিবার দিবাগত রাতেও তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। তারা উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপদ রোড থেকে সাহেদের একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে বিদেশি মদ, ফেন্সিডিল একটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে এখনও তার অনেক অপকর্ম আড়ালেই থেকে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহেদের আড়ালে থাকা সেসব অপকর্মকে দ্রুত সামনে আনতে হবে। দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব এমন সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে।
আমরা মনে করি, সাহেদের মতো প্রতারকদের শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল দেশ ও জাতি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।