খুলনাঞ্চল ডেস্ক
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে বেড়াচ্ছে এক ব্যক্তির মরদেহ। উদ্ধারকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনটি দেশকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গুরুত্ব দেয়নি কেউই। ফলে এখনও সমুদ্রজলে পড়ে রয়েছে অজ্ঞাত পরিচয়ের নিথর দেহটি।
জানা যায়, গত ২৯ জুন সিবার্ড নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী উড়োজাহাজ থেকে উত্তাল ভূমধ্যসাগরে অর্ধেক ডুবে থাকা একটি ডিঙি নৌকায় উপুড় হয়ে থাকা এক ব্যক্তির মরদেহ জড়িয়ে থাকার ছবি তোলা হয়। এরপরই উড়োজাহাজটির পরিচালক তল্লাশি ও উদ্ধারকারী সংগঠন সিওয়াচ লিবিয়া, ইতালি ও মাল্টা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায় এবং দ্রুত মরদেহটি উদ্ধারের অনুরোধ করে।
নৌকাটি কীভাবে ডুবেছে এবং এর আর কোনও যাত্রী জীবিত রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয় ওই তিন দেশের কাছে। কিন্তু তিন সপ্তাহ পরও এ বিষয়ে সাড়া দেয়নি কেউই।
প্রতিটি দেশেরই একটি নির্ধারিত সামুদ্রিক জলসীমায় অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে। তবে সামুদ্রিক অনুসন্ধান এবং উদ্ধার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যদি কোনও দেশ এ কার্যক্রমে সাড়া না দেয় তবে ওই দেশের জলসীমায় অন্য দেশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য। ভূমধ্যসাগরে ভাসমান মরদেহটি বর্তমানে লিবিয়ার অঞ্চলে রয়েছে।
সিবার্ডের পাইলট ও সমন্বয়কারী নিসকি বেকম্যান বলেন, ‘মরদেহগুলো যখন উদ্ধার ও শনাক্ত না হয়, স্বজনদের এ বিষয়ে অবহিত করা না যায় এবং এসব মরদেহ যখন সমাধিস্থ করা না হয়, তখন ইউরোপের শেষ সম্মানটুকুও এর সঙ্গে ডুবে যেতে দেখা যায়।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাবে, চলতি বছর আফ্রিকা থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে ভূমধ্যসাগরে অন্তত চারশ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ভয়ঙ্কর এই যাত্রায় ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
আইওএমের লিবিয়া মিশনের প্রধান ফেডেরিকো সোডা বলেন, ‘এগুলো স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে ভাবা বা অনেক সময় অবহেলা করাটা ভয়ঙ্কর। আমাদের মনে রাখা উচিত- তারাও মানুষ, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন রয়েছে, রয়েছে ভালোবাসার মানুষ।’
২০১৫ সালে তুরস্ক উপকূলে ভেসে আসা আয়লান কুর্দি নামে এক সিরিয়ান শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর সংঘাত-নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষের দুর্দশা নিয়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছিল সারাবিশ্বে।
সোডা বলেন, ‘এসব ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি আর ছবি অতীতে জনমত ও সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করলেও দেখা যাচ্ছে, এখন আর তা হচ্ছে না।’-সূত্র: আল জাজিরা