২৪ হাজার একর জমির পাট নষ্ট

4
Spread the love

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করেছিলেন কুষ্টিয়ায় চাষিরা। দাম ভালো পাওয়ায় অনেকেই পাট চাষে ঝুঁকেছিলেন। তবে অতিবৃষ্টির কারণে জেলার প্রায় ২৪ হাজার ১২৮ একর পাটক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে হতাশায় ডুবেছেন চাষিরা। অনেকে পাট তুলে অন্য ফসল লাগিয়েছেন। জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৫ হাজার ৫১০ একর। তবে পাট চাষ হয়েছে ৯৪ হাজার ৬৯৮ একর জমিতে। এ বছর পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ২৪ হাজার ৬৫৪ বেল। প্রতি বেলের ওজন ধরা হয় ১২৮ দশমিক ২৫ কেজি।

গত বছর কুষ্টিয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার ৫৩৬ একর। তবে পাট চাষ করা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৫৩৫একর। চলতি বছর কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ছয় হাজার ৭৯২ একর, কুমারখালী উপজেলায় ১২ হাজার ৩২৫ একর, খোকসা উপজেলায় ১০ হাজার ৬২১ একর, মিরপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৯২ একর, ভেড়ামারা উপজেলায় আট হাজার ৬০৭ একর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৪০ হাজার ৯৭৭ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামের পাটচাষি কারিম মন্ডল জানান, ‘এবার এক বিঘা জমিতে পাট বুনেছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের পাট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ওই জমিতে এখন নতুন করে অন্য ফসল লাগানো হয়েছে।’ একই উপজেলার ধুবইল গ্রামের মোমিনুল হক রাজু জানান, এবছর একবিঘা জমিতে পাট বুনেছিলাম। তবে ক্ষেতে বৃষ্টির জমে থাকায় পাটের প্রবৃদ্ধি হয়নি। পরে পাট কেটে ধান রোপণ করা হয়েছে।

মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের পাট চাষি মারুফ হোসেন বলেন, ‘গত বছর এক বিঘা জমিতে পাট বুনেছিলাম। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় এবছর পাট চাষ করিনি।’ কুষ্টিয়ার মুখ্য পাট পরিদর্শক মো. সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর চাষিরা ভালো দাম পাওয়ায় এবছর বেশি জমিতে পাট বপন করেছিলেন। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে বপনকৃত প্রায় ২৪ হাজার ১২৮ একর ক্ষেতের পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও নিচু এলাকায় বৃষ্টি পানি জমে থাকার কারণে অনেক কৃষক এবার সময়মতো পাট বপন করতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, বিঘাপ্রতি পাট চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এতে পাট পাওয়া যায় গড়ে আট মণ। গত বছর সব শেষ ২২ থেকে ২৩শ’ টাকা মণ পাট বিক্রি হয়েছিল। এ বছর পাট কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রতি উপজেলায় দুই হাজার চাষির মাঝে ১২ কেজি করে পাটের বিজ এবং সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

পাট কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কুষ্টিয়ার খোকসায় একটি মাত্র পাট ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জেলায় একটি মাত্র পাটক্রয় কেন্দ্র পর্যাপ্ত না হাওয়ায় সব এলাকার চাষিরা সুবিধা পান না। ফলে আরও একটি পাট ক্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন। কৃষকদের পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সুবিধার্থে বিশেষত দৌলতপুর উপজেলায় বিজিএমসির একটি সরকারি পাটক্রয় কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। তিনি আরও জানান, দৌলতপুর উপজেলার বড়গাংদিয়ায় নতুন একটি পাট ক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পাট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও এটি বাস্তবায়ন হয়নি।