‘সেই দম্পতি’ সাবরিনা-আরিফকে মুখোমুখি করা হচ্ছে

2
Spread the love

ঢাকা অফিস

করোনার নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের নামে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার দায় স্বামী আরিফ চৌধুরীর কাঁধে চাপিয়ে কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী বলেছেন, একজন চিকিৎসক হয়ে এই অনৈতিক মেনে নিতে পারিনি বলেই আমি জেকেজি থেকে সরে এসেছি। মঙ্গলবার (১৪ জুন) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্ত কমর্কতাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেকেজির চেয়ারম্যান একথা বলেন। তবে তার কথাবার্তায় অসংলগ্নতা প্রকাশ পাচ্ছে। ডা. সাবরিনার বক্তব্য এবং তার স্বামী আরিফের বক্তব্যের মাঝে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এসব তথ্য যাচাইয়ের জন্য তারা সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফকে মুখোমুখি করতে চান। এজন্য মঙ্গলবার আরিফ চৌধুরীকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিবির উপকমিশনার (তেজগাঁও) গোলাম মোস্তফা রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা অনেক তথ্যই দিচ্ছেন। এসব যাচাই-বাছাই করতে আরিফ চৌধুরীকেও প্রয়োজন।আমরা শক্ত ভিত্তির ওপর মামলাটাকে দাঁড় করাতে চাইছি। সে কারণেই আরিফুল হক চৌধুরীকে আবারও রিমান্ডে চেয়েছি। বুধবার ভার্চুয়াল আদালতে রিমান্ডের শুনানি হবে। এর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা নিজে দায় এড়াতে বলেছেন, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে, আবার বলছেন, ডিভোর্স কার্যকর প্রক্রিয়াধীন। দাবি করছেন তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সরকারি এ চিকিৎসক সবসময় অস্বীকার করলেও তার মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে অসংখ্য এসএমএস, যেখানে তিনি নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতেন। করোনা পরীক্ষার বিষয়ে জেকেজির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি তিনিই করিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সব অপকর্মের দায় দিচ্ছেন তার কারাবন্দি স্বামী আরিফের ওপর। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার কেঁদে কেঁদে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তিন দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হওয়ায় ডা. সাবরিনাকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ডা. সাবরিনা অনেক তথ্যই দিলেও নিজে কোনো দায় নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

করোনার নমুনা সংগ্রহের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলার প্রধান আসামী জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বন্দি রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে লবিং করে সব কাজের ব্যবস্থা তার স্ত্রী ডা. সাবরিনাই করতেন। জেকেজির সব কাজেই তিনি শুরু থেকে ছিলেন।সব কিছুই তাকে জানিয়ে করা হতো। প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জনকে গ্রেফতারের পর ৪টি মামলা রুজু হয় তেজগাঁও থানায়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে জেকেজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও প্রতিটি পরীক্ষার জন্য নেয়া হতো সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ১০০ ডলার। এসব নমুনার পরীক্ষা না করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে দিত জেকেজি। এভাবে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।

এদিকে ডা. সাবরিনা ও আরিফুল তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ করেছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এছাড়া জেকেজির প্রতারণার বিষয় অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।